জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন: যা চলছে

অনুপমা নিলয়া ত্রয়ী
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

অনুপমা নিলয়া ত্রয়ী, জলবায়ু অধিকারকর্মী, স্পেন
বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯) চলছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত ‘ফাইনান্স কপ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় এক দশক আগে প্যারিস চুক্তির পর থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা আজ বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের আকস্মিক বন্যা থেকে শুরু করে ভয়াবহ ঝড়-বৃষ্টির মতো বিভিন্ন চরম আবহাওয়ার নজির দেখা যাচ্ছে।
বিশেষভাবে আলোচিত একটি বিষয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তন। সাম্প্রতিক নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি তার পূর্ববর্তী মেয়াদে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এবারের কপ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং জার্মানির মতো দেশের শীর্ষ নেতারা অংশ নিচ্ছেন না, যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাদের প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন তুলেছে। তবে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের তালেবান প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, যা বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থায়নের প্রসঙ্গ এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়নের ধারনাটি শুধুমাত্র সবুজ বা টেকসই অর্থের চেয়েও বিস্তৃত। এটি এমন প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়ন বোঝায় যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করতে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে। অর্থায়নের জন্য অনুদান এবং ঋণের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যদিও ডেনমার্কে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্তন সভাপতি সুলতান আহমেদ আল জাবের একটি বিশেষ বক্তব্যে বলেন, “ইতিহাস আমাদের বিচার করবে আমাদের ফলাফল দিয়ে, উদ্দেশ্য দিয়ে নয়।” এ বছর সম্মেলনের সভাপতি মুখতার বাবায়েভ জানান, এবারের পরিকল্পনা দুটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে: উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ানো এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
কাস্পিয়ান সাগরের তীরে বাকুতে প্রথম দিনে ৮ ঘণ্টা তুমুল আলোচনার মাধ্যমে কপের আলোচ্য সূচি নির্ধারিত হয় যা জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য দেশগুলিকে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য করতে সক্ষম করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় দিনে আমরা রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকে শোনা ইতিবাচক দিকগুলির মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৮১% গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর এবং সুইডেনের ২০০ মিলিয়নের প্রতিশ্রুতি।
সম্মেলনে উপস্থিত মাত্র ৯ জনের একজন নারী নেতা মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলডা হেইন বলেন, আবারও, জলবায়ু বিপর্যয় এবং আমাদের গ্রহের ভবিষ্যত নিয়ে সমালোচনামূলক আলোচনা থেকে নারীদের চুপ করা হচ্ছে এবং বাদ দেওয়া হচ্ছে। তিনি লিঙ্গ সমতার অভাবের উপর জোর দিয়েছিলেন, যা আসলেই ২০২৪ সালে বেশ হতাশাজনক।
প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হওয়া ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি করেছে, যা গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তন এই সম্মেলনের প্রাসঙ্গিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই সম্মেলনের প্রতিটি ঘণ্টা এবং প্রতিটি আলোচনা আমাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার পথ সুগম করবে বলে প্রত্যাশা করছি আমি।
অনুপমা নিলয়া ত্রয়ী, জলবায়ু অধিকারকর্মী, স্পেন