ভুল চিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিয়ে ভাবা উচিত

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ভুল চিকিৎসার ঘটনা নতুন নয়। আমাদের দেশে ভুল চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যুও হয়; যার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কালেভদ্রে দুয়েকটি ঘটনা উঠে এলেও আড়ালে থেকে যায় অনেক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান ১০টি কারণের অন্যতম অনিরাপদ চিকিৎসাসেবা। সর্বশেষ রাজধানী ধানমন্ডির বাংলাদেশ আই হসপিটালে দেড় বছর বয়সি শিশুর বাঁ চোখের বদলে ডান চোখে অস্ত্রোপচার করার অভিযোগে এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে শিশুটির বাবা মাহমুদ হাসান গত বুধবার একটি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, হাসানের বাঁ চোখের মধ্যে ময়লা জাতীয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন ওই চিকিৎসক। পরে অস্ত্রোপচারের জন্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে নেয়া হয় অস্ত্রোপচার কক্ষে। কিন্তু সেখান থেকে বের করার পর পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাঁ চোখের জায়গায় হাসানের করা হয়েছে ডান চোখে। ওসি মাসুদ বলেছেন, তখন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টা চিকিৎসককে জানালে শিশুটিকে ফের অস্ত্রোপচারের কক্ষে নিয়ে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে গত বৃহস্পতিবারই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেছে, শিশুটির কোনো চোখেই অস্ত্রোপচার করা হয়নি। ছোট শিশু, তাই আউটডোরে তার চিকিৎসা সম্ভব নয় বিধায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই চোখ পরীক্ষা করে প্রথমে ডান চোখ থেকে চোখের পাপড়ি সরিয়ে দেন। পরবর্তীতে শিশুটির মা-বাবার কথার ভিত্তিতে বাঁ চোখ পুনরায় পরীক্ষার জন্য অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান ও বাঁ চোখ থেকেও চোখের পাপড়ি বের করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, চোখের উপরিভাগের ঘর্ষণজনিত সমস্যা দ্রুত নিরাময়ের জন্য ওই শিশুটির চোখ ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছিল। এটি এই ধরনের চিকিৎসার স্বীকৃত ও প্রচলিত পদ্ধতি, যা কোনো অস্ত্রোপচার বা অপারেশন নয়। বাংলাদেশ আই হসপিটাল বলছে, বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ভুল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে রোগীর স্বজনদের বরাতে দাবি করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত। প্রতিবেদনটিতে রোগীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও প্রকৃত ঘটনাকে সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। কোনটা সত্য তা বোঝার কোনো অবকাশ নেই। তবে দেশজুড়ে ভুল চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে একটা চর্চা হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হলো স্বাস্থ্যসেবা। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার শিকার ব্যক্তির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি জানা নেই অনেকের, নেই সচেতনতা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- যারা অভিযোগ করেন, বিচারের আশায় তাদের কেটে যায় দীর্ঘ সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক রোগ নির্ণয় ও দক্ষতার অভাবেই সাধারণত ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। জনস্বার্থে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনের প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি মনে করি। স্বাস্থ্য খাতের রূপরেখা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ঘটনা আমরা দেখতে চাই না।