‘অভিযোগ জানালে আমাদেরই দোষ ধরা হয়’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঋতাভরী চক্রবর্তী
অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী। গত সোমবার পাপুয়া নিউগিনিতে বসে একটি পোস্ট করেছেন। শুরুতেই ‘হেমা কমিশন’-এর উল্লেখ করেছেন ঋতাভরী। তাতে জমা পড়া মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাধিক যৌন নিগ্রহের ঘটনার কথা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ঋতাভরীকে। কমিশন যেভাবে বিষয়গুলোর মোকাবিলা করছে, তা দেখে অভিনেত্রীর মনে প্রশ্ন জেগেছে- কেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও এমন ব্যবস্থা নেই?
তিনিও যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যৌন হেনস্তার শিকার, তাও স্পষ্ট করেছেন পোস্টেই। ঋতাভরী লিখেছেন, ‘শাস্তি ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রিতে দিনের পর দিন কাজ করছেন কিছু নায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক।
তাদের কেউ কেউ আবার আরজি কর-কাণ্ডে ন্যায়বিচার চেয়ে মোমবাতি মিছিলে হেঁটেছেন, মেয়েদের রাত দখলে হাজির থেকেছেন।’ মানুষগুলোর মুখোশ খোলার নির্ভীক পরিচয় দিয়েছেন অভিনেত্রী। কথা বলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে
হেমা কমিশন নিয়ে আপনার সাম্প্রতিক পোস্টে কিছু মানুষের মুখোশ খোলার ডাক দিয়েছেন...
ঋতাভরী : সত্যি, এই কথাগুলো বলার জন্য হেমা কমিশন সত্যিই অনেক সাহস জুগিয়েছে আমায়। এই মুহূর্তে পাপুয়া নিউগিনিতে মালয়ালম ছবি ‘পাপা বুকা’র শুটিং করছি। গোটা ইউনিটটাই মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসেছে। ফলে অনেক কাছ থেকে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে বুঝতে পারছি এটা নিয়ে কথা বলা কতটা জরুরি। বারবারই মনে হচ্ছে, বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও যদি এই ধরনের কমিটি গঠিত হয়, এতদিন ধরে চলে আসা যৌন হেনস্তার কথা জানানোর একটা প্ল্যাটফর্ম পাব।
নিজের কথাও উল্লেখ করেছেন, কার মুখোশ খুলতে চাইবেন?
ঋতাভরী : লিস্টটা বিরাট লম্বা। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বেশকিছু নায়ক, প্রযোজক, পরিচালকরা রয়েছেন। ভাবছেন, নামগুলো কেন বলছি না। আসলে চাই না বিষয়টা ব্লেমগেম হয়ে থেকে যাক। আমার কাছে নাম, প্রমাণ, সবই আছে। মহিলা কমিশন বা কোনো সংগঠনের কাছে যেতে চাই। তার আগেই সরকার যদি পদক্ষেপ করে, খুব ভালো হয়। অভিযোগকারিণীরা অনেকেই হয়তো নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইবেন। তাতে আপত্তি নেই। আমি কেবল চাই, অভিযোগগুলো যেন হয়। হলফ করে বলতে পারি, তাবড়-তাবড় অনেকের নাম উঠে আসবে।
টালিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মহিলারা কেন ভয় পান?
ঋতাভরী : কাজ হারিয়ে ফেলা এবং কাউকে চটিয়ে ফেলাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পান এই ইন্ডাস্ট্রির মহিলারা। আমি এমন এক অভিনেত্রীর কথা জানি, যার হাত একজন প্রযোজক ধরেছিলেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন বলে তাকে সেই সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা সংস্থা থেকে ব্যান করা হয়। আর একটা ভয় হলো, অভিযোগ জানালে আমাদেরই দোষ ধরা হয়।
ঠিক কী কী হেনস্তার সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনাকে?
ঋতাভরী : একজন খুব নামকরা হিরো এক প্রযোজকের হয়ে ‘কাজ’ করছিলেন। নায়ক বলেছিলেন আমার একটি বিকিনি পরা ছবি দেখে কোনো এক প্রযোজক দেখা করতে চান। শুনেই নাকচ করে দিই। হিরো বলেছিলেন, ‘বাবা তুই এত বড় সুযোগ ফিরিয়ে দিচ্ছিস? তোর কিছুই হবে না, কবিতা লেখ।’ আর একবার, এক প্রযোজকের সঙ্গে মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। গোটা মিটিংয়েই তিনি আমাকে ইঙ্গিত দেন। হঠাৎ অনুমতি ছাড়া হাতটা খপাত করে ধরে ফেলেন। আমি চেঁচিয়ে উঠি। সারাটা রাস্তা গাড়ির মধ্যে প্রাণের ভয় নিয়ে বসে ছিলাম। সেদিন আমি বুকের ভেতর ভয় নিয়ে বাড়ি পৌঁছাই। প্রার্থনা করি, এমন অভিজ্ঞতা যেন কারো না হয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নতুন কাউকে কী পরামর্শ দেবেন?
ঋতাভরী : ইন্ডাস্ট্রিতে এসে ‘কম্প্রোমাইজ’ করতেই হবে, এমন কথা যদি কেউ বলেন, বিশ্বাস করবেন না। আমার ক্যারিয়ারই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। হয়তো বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে। নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাউস, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের হাউস, জিতদা-রাজদার প্রযোজনা সংস্থা আছে। এদের সঙ্গে কাজ করা এক্কেবারে নিরাপদ। ফ্লোরে কিছু ঘটলে উল্টে সরাসরি তাদেরই বলা যায়।
‘সুগার কোটেড ব্রথেল’, আপনার পোস্টে এমন একটি উক্তি আছে। এই ‘স্টিগমা’ থেকে বেরোনোর জন্য কী কী করণীয় ইন্ডাস্ট্রির?
ঋতাভরী : শুটিং ফ্লোরে ইন্টিমেসি কো-অর্ডিনেটর থাকে না। এটাকে কাজের জায়গা তৈরি করতে হবে, যেখানে কাজ করে ভালো লাগে।
শুটিং সেটে মহিলাদের জন্য কী কী সুবিধা বা ফ্যাসিলিটি থাকা আবশ্যক?
ঋতাভরী : মহিলাদের আলাদা শৌচালয় দরকার। ইন্টিমেসি ডিরেক্টর থাকাটা বাঞ্ছনীয়। পরিচালক কেন নায়িকার গায়ে হাত দিয়ে সিন বোঝাবেন? কোনো বাচ্চা মেয়ে থাকলে তার সঙ্গে অভিভাবকদের থাকার ব্যবস্থা রাখতেই হবে। আরও অনেক কিছু নিশ্চয়ই আছে, যেগুলো উঠে আসবে আলোচনায়।
নারী-পুরুষ পারিশ্রমিকের ফারাকের ছবিটা ঠিক কেমন?
ঋতাভরী : আমাদের বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পারিশ্রমিকের অঙ্কটাই খুব কম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষেই। অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, কোনো স্যাটেলাইট প্রাইজ ভেলু নেই। কোয়েল মল্লিকের মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীরও নেই। অথচ বেশিরভাগ নায়কের আছে।