পুলিশ সদস্যকে মারধর
গুলশানে ভিভিআইপির নাতির কাণ্ডে তোলপাড়

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় একজন ভিভিআইপির নাতির বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও দুর্ঘটনার পর পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। থানাপুলিশ এ ঘটনা চেপে গেলেও মারধরে আহত সেদিন মিসর দূতাবাসে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোরসালিনের সহকর্মীরা দারুণ ক্ষুদ্ধ।
মোরসালিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) ডিভিশনে কর্মরত। গত ৭ মে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে গুলশান ৯০ নম্বর সড়কে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের অদূরে ওই ভিভিআইপির নাতির মারধরে আহত হওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মারধরে তার পোশাক ছিঁড়ে যায়।
এরপর থেকে তিনি ছুটিতে ছিলেন। পরে কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননি। পদস্থ কর্মকর্তাদের বারণে তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ডিএমপির গুলশান বিভাগ ও কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের চ্যান্সরি বিভাগ থেকে তাকে ওই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে পুলিশের মধ্যে এ খবর জানাজানি হলে একজন পুলিশ সদস্যের এভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মীরা। ৭ দিন আগের ওই ঘটনায় মামলা না হওয়া এবং বিচার না পাওয়া নিয়ে তারা এখনো নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। এতে বিব্রত পদস্থ কর্মকর্তারাও।
পুলিশ সূত্রমতে, ওই রাতে বেপরোয়া গতিতে চলা প্রাইভেটকারের ভেতরে কয়েকজন যুবক ছিলেন। একই সময় ৮৬ নম্বর সড়ক দিয়ে আসা একজন বাইসাইকেল চালক ৯০ নম্বর সড়কে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। এসময় কিছুটা গতিতে আসা প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বাইসাইকেলের। এতে সাইকেলের একটি চাকা ভেঙে যায়, গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হয়।
এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হলে সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তখন পাশেই অবস্থান করছিলেন মিসর দূতাবাসে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোরসালিন। তিনি এক সহকর্মীকে নিয়ে ছুটে গিয়ে প্রাইভেটকারের চালকের আসনে থাকা যুবককে যানজট নিরসনে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবক তাতে সাড়া না দিলে মোরসালিন উচ্চস্বরে তাকে সরে যাওয়ার জন্য বলেন। একইসঙ্গে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বাইসাইকেলের ক্ষতি করেছেন বলেও জানান।
মোরসালিনের কথা শুনে চটে যান যুবক। তাদের মধ্যে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। একপর্যায়ে যুবকটি মোরসালিনের কলার চেপে ধরেন ও মারধর করেন। এসময় পাশের চা দোকানি পলাশ বাধা দিলে তিনিও মারধরের শিকার হন। মোরসালিন মারধর থেকে বাঁচার জন্য মিসর দূতাবাসের দিকে দৌড় দেন। যুবকটি তার পেছন পেছন গিয়ে আবার মারতে থাকেন। মারধরের কারণে মোরসালিনের গায়ে থাকা পুলিশের পোশাক ছিঁড়ে যায়। তখন সেখানে উপস্থিত উত্তেজিত জনতা ওই যুবককে কিছুক্ষণ আটকে রাখেন। ওই যুবক ফোনে কথা বলেন অন্যপ্রান্তে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে গুলশান থানা পুলিশ। তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আরো দুটি গাড়ি আসে। সেই গাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পুলিশের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তখন জানা যায়, ওই যুবক একজন ভিভিআইপির নাতি। গাড়িতে আসা ব্যক্তিরা তাকে সেখান থেকে নিয়ে যান। অবশ্য উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুবকটির সঙ্গে থাকা তার বন্ধুরা সটকে পড়েন। ওই রাতে মিসর ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ সদস্য এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।