টুরিস্ট ভিসায় কাজের ফাঁদ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন দেশে কর্মী যাওয়ার ঘটনা দিন দিনই বাড়ছে। কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালাল চক্র মিলে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। অভাবের সংসারে সুখ আনতে এই ফাঁদে পা দিয়ে ঋণ করে বা জমি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই।
তবে এই কায়দায় বিদেশ গিয়ে কেউ কেউ কাজ পাচ্ছেন এমন খবরও রয়েছে। যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা হয়ে উঠছেন রিক্রুটিং এজেন্সি বা দালালদের জন্য উদাহরণ কিংবা সাক্ষী। আর ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ম্যানেজ করে এই কৌশলে কাজের খোঁজে মানুষ বিদেশ যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুবাই, মালয়েশিয়া, মিসর, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তানে শ্রমিক পাঠাচ্ছে ভিজিট বা ট্যুরিস্ট ভিসায়। এজন্য জনপ্রতি ভিসা করতে নেয়া হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। বিমানের টিকেটের জন্য নিচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য নেয়া হয় ২০-৪০ হাজার টাকা।
বিমানবন্দরে গিয়ে আম, জাম, লিচু, কলা এমন সংকেতের মাধ্যমে তারা ইমিগ্রেশন পার হচ্ছে। এর সঙ্গে অনেক এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর দুবাই যেতে অনেকের কাছে জনপ্রিয় ‘নোব্যাক ভিসা’। এতে কাজ পাওয়া অনিশ্চিত জেনেও ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছেন তারা বিদেশের পথে। দুবাইয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকায় ভিজিট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় সেখানে গিয়ে কাজ করার সুযোগ খুঁজছেন অনেকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এই পথ ধরে ইউরোপ যাওয়ার উপায় খুঁজে। ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ গেলে একটা ফিরতি টিকেট লাগে।
এজন্য এয়ারলাইন্সগুলো ডামি টিকেট দেয়। তাদের লোক কাক্সিক্ষত দেশে পৌঁছে গেলে ওই টিকেটের অর্ডার বাতিল করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রী নিজেও জানেন না কী প্রক্রিয়ায় তিনি ইমিগ্রেশন পার হবেন। বিমানবন্দরে নেয়ার পর গেট নম্বর বলে দেয়া হয়। আর সংকেত হিসেবে আম, জাম, লিচু অথবা কলা বলতে বলা হয়। সংকেত মিলে গেলেই ইমিগ্রেশন পার করে দেয় পুলিশ।
সংকেত শুনে ইমিগ্রেশন পুলিশ বুঝে নেয় ওই ব্যক্তি কোন রিক্রুটিং এজেন্সির যাত্রী। আর দুবাই যাওয়ার পর সেখানে আগে থেকেই লোক রেডি করা থাকে। বিমানবন্দর থেকে ওই যাত্রীকে হোটেল বা কোনো বাসায় নেয়া হয়। কেউ কেউ ওয়ার্ক পারমিট পান, আবার অনেকেই পান না। যারা কাজ পান না তারা অবৈধভাবে কাজ করেন। এছাড়া অনেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে আউটপাসের আবেদন করে দেশে চলে আসেন। এভাবে দেশে ফেরা শরিয়তপুরের আব্দুর রহমান, মাদারীপুরের সোহরাব হোসেন, কুমিল্লা বুড়িচংয়ের শাহাদাত মিয়া, পিরোজপুরের আব্দুর রশিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ যাওয়ার ভোগান্তির গল্প।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, ভিসার ধরন এবং যাত্রীর চালচলন দেখেই ইমিগ্রেশন পুলিশ বুঝতে পারে কে শ্রমিক আর কে বেড়াতে বা ঘুরতে যাচ্ছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখলেই তারা আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফিরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো চুক্তি করে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে কাজ সারছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষ সুপার (এসএস, ইমিগ্রেশন ইন্টেলিজেন্স) ইয়াদুল ইসলাম জানান, কর্মী ভিসায় যারা বিদেশ যান তদের বিএমইটি কার্ড থাকে। তবে ভিজিট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা যান তাদের ইমিগ্রেশন থেকে যাচাই-বাছাই করেই ছাড়া হয়।