×

প্রথম পাতা

দুর্বৃত্তদের আগুনে ছাই রাহুল আনন্দের বাড়ি

স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসেন শিল্পী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্বৃত্তদের আগুনে ছাই  রাহুল আনন্দের বাড়ি
   

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও গানের দল ‘জলের গান’-এর প্রধান গায়ক রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে বাড়ির মালামাল লুটপাট করেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শিল্পীর নিজের হাতে বানানো তিন শতাধিক বাদ্যযন্ত্র। গত সোমবার রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শিল্পীর ভাড়া বাড়িতে হামলা-লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এসময় স্ত্রী উর্মিলা শুক্লা এবং ১৩ বছরের পুত্রকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে রাহুলকে। এ হামলার ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন সংগীতাঙ্গনের অনেকেই। এ নিয়ে নিন্দা প্রকাশের পাশাপাশি প্রতিবাদেও মুখর হয়েছেন শিল্পীর সংগীত সহযোদ্ধা, শ্রোতা, অনুরাগী থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা। তবে এ বিষয়ে রাহুল আনন্দের কাছ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত বছর রাহুলের ওই ভাড়া বাড়িতে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাক্রোঁ। রাহুলের বাড়িতে রাখা নানারকমের বাদ্যযন্ত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ওই বাদ্যযন্ত্রগুলোর বেশির ভাগই নিজেই তৈরি করেছিলেন রাহুল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পরে সরকার পতনের এক দফার গণআন্দোলনে অনেকের মতো নেমেছিলেন সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দও। তার বাড়িতে হামলার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে জলের গান। বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে একটি গানও। যা ওই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গান।

অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ব্যান্ডটি লিখেছে, জলের গানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত স্মৃতি, আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তা-ই নয়। জলের গানের অফিসিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সবার দলগত সংগীতচর্চা থেকে শুরু করে, সব স্টুডিও ওয়ার্ক-রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হতো।

ব্যান্ডটি লিখেছে, যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সব সময় খোলাই থাকত। তাতে তালা দেয়া হতো না। যে কেউ, যে কোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছাতে পারে, সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যে কোনো প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সবাই একটি চিত্রের সঙ্গে খুব পরিচিত, তা হলো রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তার নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন। জলের গানের বাদ্যযন্ত্র।

রাহুল আনন্দের বিরাট ভাবনা ও স্বপ্নের দিকে ধাবমান এক নিরন্তর প্রয়াস। আমাদের দেশীয় কাঠে তৈরি, আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুই কি আমাদের? এই দলের? জলের গানের? না! এই প্রয়াস সব নবীন মিউজিশিয়ানদের জন্য, যারা বিশ্বাস করবে, আমরাও আমাদের বাপ-দাদার মতো নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি!

এই প্রয়াস সেই স্বকীয়তার; যার বলে এই দেশের মানুষ গর্বের সঙ্গে বলতে পারে, এই আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা অনন্য শব্দতরঙ্গ- যা কিনা পুরো পৃথিবীর বুকে কেবল এই বাংলাদেশের মাটিতেই ঝন ঝন করে বাজে, সুর তোলে, স্বপ্ন দেখায়। যেই স্বপ্নের ঝিলিক সুদূর ফ্রান্স থেকে আরেকজন মিউজিশিয়ানকে আমাদের দেশে টেনে আনে। পুরো পৃথিবীর লক্ষ্য কোটি মানুষের চোখের আলো পড়ে আমাদের এই দেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে।

ব্যান্ডটি আরো লিখেছে, তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতোমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন, তারা সবাই খবরটি জানেন। হ্যাঁ!, রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার এবং আমাদের সবার প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সব সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন।

কিন্তু রাহুলদা এবং আমাদের দলের সব বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র এবং অফিসিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব! সবার জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তার নিজ ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়ত আজীবন লালিত থাকবে তার সন্তানের মনে; যার বয়স কিনা মাত্র ১৩ বছর- ভাবতেই কষ্ট হয়। এত দিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!

বিবৃতিতে সবার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে ব্যান্ডটি লিখেছে, এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়ত আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারব। কিন্তু এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাব কীভাবে! কেন আমরা ভালোবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে, ‘কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো? আমার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!’ সবশেষ বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারও স্বপ্ন ভেঙে না দিই!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App