ইমরান খানের মুক্তি দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান, ইন্টারনেট ব্যবহারে বিঘ্ন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইমরান খানের মুক্তি দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান। এই কারণে পাকিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটছে। কোথাও ইন্টারনেটে ধীরগতি, কোথাও বা আবার বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট সরবরাহকারীরা বলছেন, সরকারের কড়াকড়ি নজরদারির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির শীর্ষ সাইবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ)।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয় বাংলাদেশে। পাকিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় এমন জল্পনা-কল্পনাই দানা বাধছে যে, এবার কি তাহলে একই পরিণতি ঘটবে পাকিস্তানেরও। দেশটির একাধিক রাজনৈতিক সূূত্র বলছে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলে কোনো সরকারই ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে চায় না। নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে যা আমরা জানি না। অথবা এমন কিছু ঘটানো হচ্ছে বা ঘটতে যাচ্ছে যা আমাদের আতঙ্কিত করবে।
এদিকে অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবা পুনর্বহালের আদেশ চেয়ে গত বৃহস্পতিবার লাহোর হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন একজন নাগরিক। এতে অভিযোগ করা হয়, কোনো নোটিস ছাড়াই সরকার ইন্টারনেট পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারীরা সরকারকে দোষারোপ করে বলেছে, ইন্টারনেট ট্রাফিকে তাদের বেশি বেশি নজরদারির চেষ্টার কারণেই দেশব্যাপী এই নেট বিভ্রাট ঘটেছে। পাকিস্তানের পত্রিকা দ্য ডন জানায়, ‘অয়্যারলেস অ্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান’ (ডব্লিউআইএসপিএপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারের নিরাপত্তা এবং নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এই অপ্রত্যাশিত পরিণতি বয়ে এনেছে। দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি অচল হয়ে পড়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেটের গতি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ধীর হয়ে পড়েছে। এতে অনলাইন ব্যবসায়িক লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবহারকারীরা অনেক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেননি। পাকিস্তানজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা পাঠাতে কিংবা কোনো কিছু আপলোড বা ডাউনলোড করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
দেশজুড়ে ইন্টারনেটের এই বিভ্রাটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নেতৃত্বধীন জোট সরকার এবং দেশের শীর্ষ সাইবার রেগুলেটর দ্য পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথোরিটি (পিটিএ) মুখে কুলুপ এটে আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ‘অয়্যারলেস অ্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান’ (ডব্লিউআইএসপিএপি) এর চেয়ারম্যান শাহজাদ আরশাদ বলেছেন, সরকার তাদের পদক্ষেপ থেকে পিছু না হটায় ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ে আতঙ্ক বাড়ছে।
পাকিস্তান চ্যালেঞ্জিং এই সময় পাড়ি দেয়ার মধ্যে থাকায় দেশের ভবিষ্যত ডিজিটাল সব সেবাই অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে ঝুলে আছে। সরকার নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে, কিন্তু দেশের ডিজিটাল অথর্নীতিকে এর কী মূল্য দিতে হচ্ছে সে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে- বলেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে এক্স (সাবেক টুইটার) বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। ওই সময় জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকির অজুহাতে এটা করা হয়। ইন্টারনেটে ধীরগতির কারণে ব্যবহারকারীরা অনেক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছেন না। এসব ওয়েবসাইটে ঢুকতে ভিপিএন ব্যবহার করতে হয়।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা জানান, পাকিস্তানজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে বার্তা পাঠাতে কিংবা কনটেন্ট আপলোড ও ডাউনলোড করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। অনেক সময় সেটাও করা যাচ্ছে না।
নেটিজেনদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটানোর মাধ্যমে সরকার শুধু যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে না বরং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। সেসঙ্গে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।