×

প্রথম পাতা

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম কারামুক্ত, জনমনে প্রশ্ন-উদ্বেগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম কারামুক্ত, জনমনে প্রশ্ন-উদ্বেগ

ছবি: সংগৃহীত

   

গ্রেপ্তার হওয়ার ২৭ বছর পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও গতকাল বুধবার সকালে বিষয়টি জানা যায়। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় জামিনে মুক্তি পান শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম। ২০১৪ সাল থেকে তিনি এই কারাগারে বন্দি ছিলেন।

এদিকে সুইডেন আসলামের মুক্তিতে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। তবে আমরা এখন একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন অবস্থায় একজন পেশাদার আলোচিত শীর্ষ অপরাধীর মুক্তি নিয়ে অবশ্যই জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়াসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। যেখানে অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি সংকটাপন্ন, সেখানে শেখ আসলামের মুক্তির পর পুলিশ তাকে কীভাবে নজরে রাখবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এদিকে দাগি অপরাধীরা কেন ও কীভাবে ছাড়া পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

পুলিশ, কারাগার ও জ্যেষ্ঠ অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক সূত্র বলছে, সুইডেন আসলামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে তার বাবা শেখ জিন্নাত আলী পরিবার নিয়ে থাকতেন রাজধানীর ইন্দিরা রোডে। ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের দোকান ছিল জিন্নাত আলীর। তার তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ফার্মগেটে উঠতি রংবাজ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

জানা গেছে, স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে আসলামের উত্থান পর্বের সূচনা হয় আজাদ ও বাপ্পী নামে দুই সহোদরকে পেটানোর মাধ্যমে। ওই দুই ভাই তখন ফার্মগেট এলাকার অপরাধকর্মসহ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পীকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম। এরপর পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখেন। তখন থেকে উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোরকে হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের হত্যাকাণ্ডের শুরু। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজার

নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন করা হয় শাকিলকে। সেই হত্যাকাণ্ডে আসলামের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম আসে তারা হলেন- পূর্ব রাজাবাজারের সুমন, ব্যাটারি বাবু, মণিপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।

যেভাবে নাম হলো সুইডেন আসলাম : জানা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় চাইনিজ নামের এক সন্ত্রাসী ছিলেন। তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে তার সুইডেন প্রবাসী বোন ইতিকে বিয়ে করেন আসলাম। শাকিলকে খুনের পর আসলাম সুইডেনে স্ত্রীর কাছে চলে যান। কিন্তু সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর আসলাম দেশে ফিরে তার সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। সুইডেন থেকে আসার কারণে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নাম হয়ে যায় সুইডেন আসলাম।

শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে দাপট : সাবেক স্ত্রী ইতির দ্বিতীয় স্বামী মামুন, নিজের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিপুল, কিসলু সহযোগী গাব্বুর স্ত্রী আসমা, মিরপুরে রানা, সাজ্জাদ ও টাঙ্গাইলের ছাত্রনেতা শামীম তালুকদারও সুইডেন আসলামের হাতে খুন হন বলে অভিযোগ ওঠে। নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে কারওয়ান বাজারের পিচ্চি হান্নান, মগবাজারের সুব্রত বাইন ও টিক্কার সঙ্গে এক হন আসলাম। তখন শোনা যেত, বিএনপির এক নেতার প্রশ্রয় পাচ্ছিলেন আসলাম। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর সুইডেন আসলামের নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তুলে তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এভাবেই দাপুটে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন আসলাম।

যেভাবে গ্রেপ্তার : তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হন সুইডেন আসলাম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তেজকুনিপাড়ার বাসার সামনে খুন হন গালিব। গালিবের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তখন তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর ২৬ মে গ্রেপ্তার করা হয় সুইডেন আসলামকে।

কারাগার থেকেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ : ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হলেও সুইডেন আসলাম কারাগারে বসেই তার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম না থাকলেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এই কাজ করতেন তিনি। কারাগারে তার সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের খবরও এক সময় এসেছিল। তার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছিলেন, তাদের ও সেসব মামলার সাক্ষীদেরও হুমকি দিতেন সুইডেন আসলাম। সেই হুমকি পেয়ে অনেক বাদী ও সাক্ষী আদালতে যেতেন না বলে বেশির ভাগ মামলা থেকে তিনি খালাস পান।

যেভাবে মুক্ত হলেন : জানা গেছে, এ শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ২২টি মামলার তথ্য মেলে পুলিশের কাছ থেকে। এর মধ্যে ৯টি হত্যা মামলা, বাকিগুলো অপহরণ-চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের মামলা। অস্ত্র আইনের ২টি মামলায় তার যাবজ্জীবন ও ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান। তবে গালিব হত্যা মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর বিচার শুরু হলেও ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আদালতে আনা গেছে। আসলামের ভয়ে এই মামলার সাক্ষীরাও আদালতে যান না। এই একটি মামলায় আসলাম আটকে ছিলেন। এর আগে শোনা গিয়েছিল, কারাগারের বাইরে বের হলে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় বাকি একটি মামলায় জামিনের আবেদন করছেন না সুইডেন আসলাম। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও সরকার পরিবর্তনের পর সেই মামলাটিতে জামিন নিয়েই কারামুক্ত হয়েছেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। তবে আমরা এখন একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে একজন পেশাদার আলোচিত শীর্ষ অপরাধীর মুক্তি নিয়ে অবশ্যই জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়াসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। যেখানে অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি সংকটাপন্ন। সেখানে শেখ আসলামের মুক্তির পর পুলিশ তাকে কীভাবে নজরে রাখবে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি এ ধরনের অপরাধীরা মুক্ত হয়ে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিন্তু গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত অবস্থার পর অনেক থানার অস্ত্র লুট হয়েছে, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা উচিত ছিল। যদিও সরকার বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুইডেন আসলামের মুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, কেন তিনি ছাড়া পেলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App