×

প্রথম পাতা

ভোটের রাজনীতি

আসন ‘সমন্বয়’ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির

Icon

রুমানা জামান

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আসন ‘সমন্বয়’ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির
   

নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রæতি বরারবই দিয়ে আসছে দেশের অন্যমত প্রধান দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামী দিনের রাজনৈতিক পথচলা, আসন বণ্টন ও ক্ষমতার অংশীদারত্ব প্রশ্নে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করেই ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনে ‘আসন সমন্বয়’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড।

সূত্র জানায়, নির্বাচনী আসনভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনের জোট নেতাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যার অনুলিপি পৌঁছে দেয়া হয়েছে জোট নেতাদের হাতেও। তবে এ চিঠির ব্যাপারে কোনো নেতাই সরাসরি মুখ খুলতে চাননি।

সূত্রের দাবি- ওই চিঠিতে জোটভুক্ত নেতাদের জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের থানা, উপজেলা, পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি জোটের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও দিয়েছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের ছয় নেতাকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে ঢাকা-১২, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে পটুয়াখালী-৩, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে ঝিনাইদহ-২ এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রতিটি চিঠিতে ওই সব আসনের থানা-উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতাকর্মীকে জোট নেতাদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এসব চিঠির বাইরে ১২ দলীয় জোট নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মৌখিকভাবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীকে এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের মাঠেও বিএনপির সঙ্গে জোট ‘একাট্টা’, এই বার্তা দিতে আসন সমন্বয়সহ আগামীতে আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দলটি।

জানতে চাইলে চিঠির বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, একটা দীর্ঘ আন্দালনের পর সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনে ১০টি দল জিতল। ৫ জন, ১০ জন, ১৫ জন- যা নিয়ে হোক জিতল। তাদের নিয়ে আমরা একটা জাতীয় সরকার করব। আমাদের কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে, ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে চাই এই কনসেপ্টের ভিত্তিতে; যেখানে এই দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার করা হবে। সুতারাং এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কয়েকজন নেতা জানান, এসব চিঠির মাধ্যমে তারা যাতে প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগের মতো কর্মসূচি, কর্মিসভা, সাংগঠনিক সভা যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছেন জোটের এমন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি এত বেশি ‘সেনসেটিভ’ যার কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলা এই মুহূর্তে আমার জন্য ঝুঁকি হয়ে যায়। কারণ, এখানে অনেক হিসাব নিকাশ রয়েছে। তবে এইটুকু বলতে পারি চিঠি পেয়েছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমি এলাকায় এসে ইতোমধ্যে কাজ করা শুরু করেছি।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, ৫ আগস্টের পর তাদের নিজ আসনে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে যুগপৎ জোট নেতাদের। কারণ, এসব আসনের বেশির ভাগেই ২০১৮ সালে জোটগতভাবে তারা নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু সেখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এবার জোটকে ছাড়তে নারাজ। ফলে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারাও জোট নেতাদের কোণঠাসা করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছিল। এমনকি হামলা মামলার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে বাধ্য হয়েই যুগপৎ নেতারা বিএনপির হাইকমান্ডের শরণাপন্ন হন। পরে তৃণমূল কর্মীদের থামাতে এ চিঠি পাঠিয়ে জোট নেতাদের সহয়তা করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এমনকি সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ ব্যাপারে কোনো ঝামেলা না করতে আলাদা করে টেলিফোন করে সতর্ক করেন তারেক রহমান।

নাগরিক ঐক্যের একজন নেতা জানান, তাদের দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে বগুড়া থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যরা জোটগত নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসন থেকেই মান্না নির্বাচন করতেন। আগামীতেও তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। যার কারণে ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন হত্যা মামলায় স্থানীয় নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না ভোরের কাগজকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। এই বিষয়ে আপাতত আর কিছু না বলি’।

জোট নেতাদের দেয়া চিঠির বিষয়ে বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ন হলো- এ চিঠির মাধ্যমে মূলত জোট নেতাদের আসনভিত্তিক নির্বাচনে প্রাক নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে যুগপৎ জোট নেতারা বহু মামলা, হামলা নির্যাতনের মুখেও রাজপথে অটল ছিলেন। দিনের পর দিন তারা জেল খেটেছেন। ফলে বিগত দিনের আন্দোলনে জোট নেতাদের ভূমিকা, তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে পুরস্কারস্বরূপ এ চিঠি দেয়া হয়েছে। এটা তাদের এক ধরনের স্বীকৃতি।

এদিকে, রাজনীতির মাঠে ঐক্য জোরালো করতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ৪২ দল এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী ৬৪ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৈঠকে বিএনপি পক্ষ থেকে তাদের জাতীয় সরকারের অংশীদার করার আশ্বাস দিয়ে অতীতের মতো জোটবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে দলগুলোকে বিএনপির প্রতি আস্থা রেখে একসঙ্গে পথ চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, আপতত জামায়াতের সঙ্গে তৈরি ‘দূরত্ব’ ঘোচানোর চিন্তা বাদ দিয়ে ধারাবাহিকভাবে অন্য সবদলগুলোর সঙ্গেই বৈঠকের কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল সিপিবি, বাসদসহ অন্যান্য দলের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সব দলকে নিয়ে আমরা এগোতে চাই। সবাই একসঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, বিএনপি বিজয়ী হলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বার্তা যুগপৎ জোট ও বাকি দলগুলোকে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আগামীতেও রাজনৈতিক ঐক্য বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে বিএনপি। সংস্কার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App