লিয়াকত হোসেন সহসভাপতি, রিহ্যাব
খুব কঠিন সময় পার করছি

মরিয়ম সেঁজতি
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড্যাপসহ বেশ কিছু কারণে দেশের আবাসন ব্যবসা অনেকটাই স্থবির। ঢাকায় ফ্ল্যাট বুকিং ও বিক্রি কমে গেছে। ছোট ও মাঝারি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। এর আগে তিনি ২০১২-২০২০ সাল প্রায় আট বছর রিহ্যাবের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আবাসন খাতের বর্তমান সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মরিয়ম সেঁজতি-
ভোরের কাগজ : দীর্ঘ একযুগ পর নিয়ম মেনে নির্বাচনের পর গত মার্চে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর গত জুলাই থেকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পালটাতে শুরু করে। আবাসন খাতের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে।
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : আমরা আগেও মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এখনকার মন্দা থেকে বের হতে পারছি না। আকস্মিক পটপরিবর্তনের কারণে বর্তমানে সব ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আবাসন ব্যবসায়ীরা খুবই কঠিন সময় পার করছেন। এছাড়া আরো একটি প্রধান কারণ- ড্যাপ। সরকারের সিদ্ধান্তে ২০২৪ সালে তৈরি করা ড্যাপের প্রভাবে আমাদের অনেক প্রকল্প প্রায় বন্ধের পথে।
অনেকে মনে করছেন, আমরা কাজ করতে পারছি না বলে ফ্ল্যাটের দাম কমবে- বিষয়টি একেবারেই ভুল। কারণ এর ফলে ফ্ল্যাটের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদার চেয়ে পণ্যের পরিমাণ কম থাকলে তার দাম বেড়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক যে অস্থিরতা কাজ করছে- তারও প্রভাব পড়বে। এই ফ্ল্যাটগুলোর দাম তখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। আমাদের সঙ্গে রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ আরো প্রায় ২৫০টি ব্যাক লিঙ্কেজ শিল্প জড়িত। জিডিপিতে আমাদের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব হারাবে। বেকারত্ব বাড়বে। ফলে সমাজে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বাড়বে। বর্তমানে ড্যাপ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ড্যাপ সংশোধন হলে আমাদের এ খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্লট ও ফ্ল্যাটের অত্যধিক রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর বিষয়ে খুব দ্রুত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে রিহ্যাব। পাশাপাশি এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের সবশেষ ক্ষয়ক্ষতি জানতে এবং করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছি।
ভোরের কাগজ : ড্যাপ নিয়ে কেন এত বিতর্ক?
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : বিগত আওয়ামী সরকার মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে এ ড্যাপ করেছিল। কারো বাড়ি পুরান ঢাকা বা তার আশপাশে। শুধু ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী বাদে যেসব জায়গায় ড্যাপের নেগেটিভ প্রভাব পড়েছে- কারো হয়তো এক টুকরা জায়গা আছে। তারা ভাইবোনেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো- ১০ তলা ভবন করে ভাগ করে নিবে। কিন্তু এখন ড্যাপের বর্তমান নকশা অনুযায়ী আপনি ওই জায়গায় ৪ থেকে ৫ তলা পর্যন্ত করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা তো হবেই। পাশাপাশি ডেভেলপার কোম্পানিও আসতে চাইবে না। কারণ তার তো কোনো বেনিফিট থাকবে না।
ভোরের কাগজ : বর্তমান সরকারের সঙ্গে আপনাদের বৈঠক হয়েছে। তার কাছ থেকে কেমন সাড়া পেলেন?
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : বর্তমান সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আমাদের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। রাজউকের চেয়ারম্যানও বুঝেছেন। তারা শিগগিরই ড্যাপের একটি সুন্দর সংশোধন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেকগুলো মিটিং করেছি। এখনো চলমান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টির সমাধান করতে।
ভোরের কাগজ : ভবন নির্মাণের প্রায় সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। সেটার প্রভাব কেমন পড়েছে বলে মনে করেন?
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : রড, সিমেন্টসহ সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে, যা আমাদের ফ্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাধার সৃষ্টি করেছে। কারণ পণ্যের দাম বাড়লে ফ্ল্যাট নির্মাণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ছে। সাধারণ ক্রেতার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বর্তমানে রডের দাম কিছুটা কমেছে। ড্যাপের কারণে ফ্ল্যাট নির্মাণ কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে। সবকিছু নিয়েই এ খাতের ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। ক্রেতারা কিস্তি দিতে পারছেন না, আবার অনেক ক্রেতা টাকা ধরে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতোমধ্যে আবাসন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি ও সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে রিহ্যাব। সরকারও আমাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।