গায়ের জোরে একতরফা ভোট করতে চায় না নির্বাচন কমিশন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমরা অতীতের মতো একতরফা ও গায়ের জোরের নির্বাচন আর দেখতে চাই না। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর দেয়া হয়েছে সেটা পালন করতে যা যা করা দরকার তাই করব। আমরা জাতিকে একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা করব। গতকাল রবিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেয়ার পর আগরগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে দায়িত্ব নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার। পরে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় নতুন চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমান মাসুদ, বেগম তহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সদ্য দায়িত্ব নেয়া সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে, তার আগে নয়। তাই দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না কবে নির্বাচন হবে। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু করব। তবে ইলেকশন করার জন্য যে যে রিফর্ম প্রয়োজন, সেটা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না। তিনি বলেন, ‘ফেক ভোটার আছে শুনেছি, রাজনৈতিক দলের মধ্যেও (সংসদ) দ্বি-কক্ষ হবে নাকি বর্তমানের মতোই থাকবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। কেউ চায় আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কেউ চায় এখনের মতোই। এসব বিষয়ে ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেব? রিফর্ম কমিশন থেকে সাজেশন আসবে। সবার থেকে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করে তারপর ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন হবে।
সিইসি বলেন, আমাদের সব প্রচেষ্টা নিবিড়ভাবে থাকবে যাতে একটা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা যায় এবং এর জন্য সর্বশক্তি নিয়োজিত করব। একটা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার করব। আওয়ামী লীগ ও এর জোটবদ্ধ দলগুলোর নির্বাচনে আসার প্রশ্নে তিনি বলেন, রিফর্ম কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সহযোগীদের ব্যাপারে ফয়সালা হলে বলতে পারব। এটা তো জাতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন মন্তব্য করতে চাই না।
সরকারের সংস্কার কমিশনের উদ্যোগুলো তুলে ধরে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, আপনারা রিফর্মসের সুপারিশগুলো আমাকে দেন। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসব। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হবে সেগুলো আমরা নেব। যেখানে বিতর্ক হবে, কোনো কোনো দল মানবে না, সেগুলো পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিয়ে যাবে। সুতরাং, সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য- সেগুলো নিয়ে আমরা কাজে নেমে পড়ব। আমাদের তরফ থেকে আমরা যথাসম্ভব নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি আজ থেকেই নেব। কিন্তু রিফর্মসগুলো না এলে নির্বাচন করতে পারব না।
নতুন সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন করার জন্য যে যে সংস্কারগুলো করা দরকার, যেগুলো ছাড়া করা যাবে না এবং অনেকগুলো রিফর্ম কমিশনের ইন্টাররিলেটেড। স্থানীয় সরকার সংস্কার ও সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত না হলে শুধু বদিউল আলম মজুমদারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তো নির্বাচন করা যাবে না।
নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার শেষে ভোট কিনা জানতে চাইলে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, অবশ্যই। নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় রিফর্মগুলো হলেই তারপরে হবে, না হলে আমার পক্ষে সম্ভব না। নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে সিইসি নাসির বলেন, চ্যালেঞ্জ একটাই, একটা সুষ্ঠু, ন্যায় ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা।
এই কমিশন এক তরফা নির্বাচনে বিশ্বাসী না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কোনো দল নেই। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। আমাদের ওপর তাই কোনো রকম চাপ নেই। ... আমি কনভিন্সড, সামনেও কোনো চাপ থাকবে না। আমরা একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমাদের শতভাগ প্রচেষ্টা থাকবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস আছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমরা দায়িত্ব নিলাম, যে চ্যালেঞ্জই আসবে তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করব। আমাদের মূল কাজ সাধারণ মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে আগ্রহী করে তোলা। আমরা খাস নিয়তে কাজ করছি। অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করব। আমাদের সব প্রচেষ্টা থাকবে, যেন সব ভোটার নিশ্চিতে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করা।
এর আগে দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ লাউঞ্জে নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শপথ শেষে সুপ্রিম কোট থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাৎক্ষণিক বক্তব্যে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জনগণকে উপহার দেয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা এই জাতিকে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেব ইনশাল্লাহ। আমার নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন হবে।
নাসির উদ্দীন বলেন, ফার্স্ট অব অল শপথ নিয়েছি। শপথের সম্মানটা রাখতে চাই। শপথ সমুন্নত রাখতে চাই। আমি এটাকে নিজের জীবনের বড় অপরচুনিটি হিসেবে দেখছি। অপরচুনিটি টু সার্ভ দ্য নেশন। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচনের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে। অনেক আন্দোলন করেছে বিগত বছরগুলোয় এবং অনেকে রক্ত দিয়েছে। আমি তাদের একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেয়ার জন্য সর্বোচ্চটুকু করব।
সিইসি বলেন, সবাই মিলে, আপনাদের সবার সহযোগিতা নিয়েই কিন্তু (নির্বাচন) করতে হবে। আমরা একা পারব না। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। দেশবাসীর সহযোগিতা লাগবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা লাগবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা এই জাতিকে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেব।
এবারের মতো সুযোগ আগে ছিল না উল্লেখ করে নাসির উদ্দীন বলেন, শুধু আমরা নই, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। তারা ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে বলে আসছে তারা ভোটের অধিকার চায়, অবাধে ভোট দিতে চায়। সুতরাং, তাদের সঙ্গে পাব। তাদের ডিমান্ডটা বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করব। সুতরাং, আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারাও জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ।