জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব: ভস্মীভূত গাড়িগুলো যেন কঙ্কাল

রুমানা জামান
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুর অঞ্চল-৪ অফিসের মূল ফটকের সামনে উৎসুক জনতার ভিড়। ভেতরে উঁকি মেরে আঁতকে উঠছেন অনেকেই। কেউ কেউ দুঃখ করে বলেন, ‘আহারে এতগুলো গাড়ি পুড়িয়ে দিল! দেশের ক্ষতি করে কী লাভ হলো ওদের?’ ডিএনসিসির এই আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া বর্জ্য পরিবহনের সারিবদ্ধ গাড়িগুলো। আগুনে গাড়ির টায়ারগুলো গলে রাস্তার পিচের সঙ্গে মিলে গেছে। ভস্মীভূত ইঞ্জিন চুঁইয়ে কালো ডিজেল গড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ভাঙা কাঁচের টুকরো। দগ্ধ গাড়ির ভেতর থেকে এখনো বেরুচ্ছে উটকো ঝাঁঝালো গন্ধ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৯ জুলাই দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ছারখার হয়ে গেছে ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ অফিসের অন্তত ৩০টি বর্জ্য পরিবহনের গাড়িসহ নগরবাসীর সেবাদানে ব্যবহৃত ৪৯টি যানবাহন। আগুন দেয়া হয় সংস্থাটির বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে। ভাঙচুর করা হয় সড়কের বিভাজক, সড়কবাতিসহ অনেক কিছু।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সেবাকাজে ব্যবহৃত ডিএনসিসির যানবাহনের চার ভাগের এক ভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে নাশকতাকারীরা। এতে অন্তত ২০৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নাশকতাকারীদের আগুনে পুড়ে যাওয়া আমাদের বর্জ্য পরিবহনের জাপানি গাড়িগুলো (কম্প্যাক্টর) আনতে কমপক্ষে ১৪ মাস সময় লাগবে। কারণ, অর্ডার করার পরে এগুলো তারা বানিয়ে দেয়। আর ভারত থেকে আনতে গেলেও অন্তত এক বছর সময় লাগবে; ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। আমরা আলোচনা করছি কীভাবে এগুলো অন্যভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। কারণ, ঢাকা মহানগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ তো বন্ধ রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, মিরপুরে বিভিন্ন জায়গায় ময়লা পড়ে আছে, একটি কম্প্যাক্টর দিয়ে চার থেকে ছয়টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়ি দিয়ে ময়লা সরানোর কাজ করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৪শ টন বর্জ্য পরিষ্কারের সক্ষমতা আমরা হারিয়েছি। মেয়র বলেন, নাশকতাকারীরা আমাদের সড়কবাতির অনেক ক্ষতি করেছে। ৫০টি সড়কবাতির জন্য একটি ভিপি কন্ট্রোল থাকে; সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। অনেকগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ৫৮টি ডিপি চুরি এবং ভেঙে ফেলার তথ্য পাওয়া গেছে। যার একটি বাক্সের দামই প্রায় ২০ লাখ টাকা।
ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুর অঞ্চল-৪ অফিসে বর্জ্য পরিবহনের ভস্মীভূত গাড়ির বিষয়ে খোঁজখবর জানতে সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। ভোরের কাগজকে তারা বলেন, ঘটনার দিন গত ১৯ জুলাই দুপুরে ১৫ থেকে ২০ জন লোক হাতে রাম দা নিয়ে কপোরেশন অফিসে হামলা করে। তারা একের পর এক গাড়িতে আগুন দিতে থাকে। মূল ফটকে নিরাপত্তা কর্মী বাধা দিতে গেলে তাকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলে রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা ওই ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আগুনে দাউদাউ করে গাড়িগুলো জ্বলছিল। একের পর এক টায়ার বিস্ফোরিত হচ্ছিল, প্রচণ্ড তাপে সেখানে টিকে থাকা যাচ্ছিল না। দুর্বৃত্তরা এতটাই ভয়াল পরিবেশ সৃষ্টি করে যে, তাদের বাধা দেয়ার সাহস তো দূরের কথা, কর্মকর্তারা নিজেদের জান বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন। অনেকে দৌড়ে দেয়াল বেয়ে বাইরে পালিয়ে যান। এমনকি কোনো উপায় না পেয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা দৌড়ে গাছে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা ফিদা হাসান বলেন, বর্জ্য পরিবহনের এতগুলো গাড়িতে আগুন দেয়ায় আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ৪ দিনে ১০ হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। তবে আমরা বসে নেই, কাজ চলছে। বড় ক্রেন দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার টন করে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। পোড়া গাড়িগুলো অপসারণের ব্যাপারে তিনি বলেন, আফসোসের বিষয় হলো- গাড়িগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে, এগুলোর ইঞ্জিনসহ সবকিছুই পুড়ে গেছে। এখন যা পড়ে আছে তা কেবলই জীবাশ্ম; রিপেয়ারিং সম্ভব না। পুরোটাই ‘ওয়েস্ট’ লিস্টে চলে গেছে। দুয়েকদিনের মধ্যেই আঞ্চলিক অফিস থেকে এগুলো অপসারণ শুরু হবে।