×

শেষের পাতা

সচেতন নাগরিক সমাজের বিবৃতি

তৃতীয় পক্ষের হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তৃতীয় পক্ষের হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেবেন না

ছবি: সংগৃহীত

   

দেশ ও জাতির সংকটকালে মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা বিধান এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিরাপদ রাখার জন্য দেশের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ৬ দফা প্রস্তাব করা হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও দ্রুত এর ভেতর তৃতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাত, হত্যা ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যায়।

এই আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের কতিপয় মন্ত্রীর মন্তব্য, আন্দোলন দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি এবং গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না। এক মাসের আন্দোলনে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়া এবং কয়েক হাজার আহতের ঘটনা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না।

আজও (গতকাল রবিবার) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় পক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় বহু কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ধ্বংস হলেও হতাহতের যেসব মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে, যেভাবে শত শত পরিবারের স্বপ্ন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও জীবিকা ধ্বংস হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে- তা কখনো পূরণ করা যাবে না। সরকার যখন আন্দোলনকারীদের মূল দাবি মেনে নিহত, আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির অঙ্গীকার করে উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে।

তখন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কোটা আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী তৃতীয় পক্ষ সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফা দাবি সামনে এনে ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে অভিভাবক ও নাগরিকদের বিভিন্ন অংশের সমর্থনের সুযোগে যেভাবে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে, তা শুধু ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম সত্তাকে বিপন্ন করবে না, ভূ-রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে অবধারিতভাবে এখানে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ হবে। আমাদের যাবতীয় অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা মনে করি, দেশ ও জাতির এই মহাদুর্যোগকালে আন্দোলনকারী ও সরকারকে আলোচনায় বসে দাবি পূরণের প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে হবে। সরকার পরিবর্তন যদি আন্দোলনকারীদের প্রধান উদ্দেশ্য হয় সেটা হতে হবে সাংবিধানিকভাবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়; সংঘাত, সন্ত্রাস ও অমূল্য প্রাণহানির মাধ্যমে নয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ’৯০-এর দশকে জেনারেল এরশাদের অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী সামরিক সরকার উৎখাতের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলের নেতৃত্বাধীন পৃথক পৃথক জোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব, নারী, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্মিলিত আন্দোলন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর হয় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়, বঙ্গভবন দখল করে নয়। অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনকে উৎসাহিত করা হলে বাংলাদেশের অবস্থা অচিরেই আফ্রিকার গৃহযুদ্ধবিপর্যস্ত অনুন্নত দেশগুলোর মতো হবে- যা কোনো সচেতন নাগরিকের কাম্য হতে পারে না।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সরকার ও আন্দোলনকারীদের প্রতি তাদের প্রস্তাবগুলো হলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ- দ্রুত সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের অন্যান্য ন্যয়সঙ্গত দাবি পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিন।

বাংলাদেশের অস্তিত্বের স্বার্থে তৃতীয় পক্ষের হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারকে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে এবং এসব মৃত্যুর জন্য যে বা যারা দায়ী যথাযথ তদন্ত ও বিচার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত ও আহত সবাইকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান- উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করুন। তবে এই ঘোষণা জেল ভেঙে পলাতক জঙ্গি সন্ত্রাসী কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের জন্য চিহ্নিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। বন্ধ করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করুন এবং ক্যাম্পাসসমূহের যাবতীয় নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করুন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্ততপক্ষে এক বছরের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, শিল্পী হাশেম খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. ফওজিয়া মোসলেম, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, মানবাধিকার নেতা কাজল দেবনাথ, আসিফ মুনীর তন্ময়, অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, মিলন কান্তি দে, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ।

টাইমলাইন: কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App