×

শেষের পাতা

মণ্ডপে-মন্দিরে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন নারীরা

দুঃখ ভুলে হাসিমুখে ‘মা’কে বিদায়

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুঃখ ভুলে হাসিমুখে ‘মা’কে বিদায়
   

‘আজ বিদায় বেলা, সিঁদুর মাখা মুখবিবরে/আঁখিতে সবার অশ্রæ ঝরে/তবুও আনন্দ জমে মনের কোণে/ ফিরবে মা বছর পরে।...’ এই আশা নিয়ে দুর্গাপূজার সবশেষ রীতিতে অংশ নিয়েছেন বাঙালি হিন্দু নারীরা। শাস্ত্র অনুযায়ী দশমীর দিন সবশেষ রীতি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। যা বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, বরদেশ্বরী কালীমন্দির, রমনা কালীমন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ভোলাগিরি আশ্রমসহ বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে দেবীর বিদায়ের দুঃখ ভুলে মেতেছিলেন সিঁদুর খেলায়। নাচে-গানে আর পরস্পরকে সিঁদুর ছুঁইয়ে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা।

রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে সিঁদুর খেলায় অংশ নিয়েছেন স্মৃতি দেব। সঙ্গে ছিলেন সদ্য বিবাহিত তার মেয়ে ব্রততী দেব। দেবীর পায়ে সিঁদুর নিবেদনের পর তা প্রথমে নিজের সিঁথিতে এবং পরে হাতে রাখা সিঁদুর কৌটা থেকে কিছুটা সিঁদুর নিয়ে মেয়ের সিঁথিতেও ছোঁয়ালেন। ব্রততীও করলেন একই কাজ। স্মৃতি দেব বলেন, জগতের এবং পরিবারের সবার মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি। তার পায়ে সিঁদুর ছুঁয়ে দিয়ে তার কিছুটা সিঁথিতে লাগালে স্বামী ও সংসারে মঙ্গল হয়।

ব্রততী বলেন, বিয়ের পর এবারই আমার প্রথম দেবী বরণ। আগে মা’র সঙ্গে এসে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতাম। সিঁদুর গালে লাগাতাম। এখন সবাই সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন। এটা একটা অন্যরকম অনুভূতি। মা’র কাছে শুধু নিজের জন্য নয়, সবার জন্যই প্রার্থনা করেছি। দেশের শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছি। দেশ ভালো না থাকলে আমরা কেউই ভালো থাকব না। ভোলাগিরি আশ্রমের পূজামণ্ডপে নিবেদিতা কর্মকার দেবী দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী ও সরস্বতীর চরনে সিঁদুর ছুঁইয়েছেন। সেখানে রেখেছেন ধান, দূর্বা, ফুল।

তাদের পাশাপাশি কার্তিক-গণেশকেও দিয়েছেন লাড্ডুর ভাগ। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মাঠে পূজার আয়োজন করে ইয়াং স্টার ক্লাব। সেখানে কথা হয় পাঁপড়ি পোদ্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মায়ের সঙ্গে এসেছি। মা সিঁদুর খেলছেন। এই আচারটা সধবা নারীরাই পালন করেন। আমার যেহেতু এখনো বিয়ে হয়নি তাই এই খেলায় অংশ নিতে পারব না। তবে আমরা বন্ধুর একে অপরের গালে সিঁদুর মাখিয়েছি।

সিঁদুর খেলা দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জানা যায়, দুর্গাপূজায় সিঁদুর খেলার ইতিহাস প্রায় ৪৫০ বছরেরও পুরনো। সিঁদুরকে বিবাহিত নারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হয়। স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় সিঁথিতে লাল সিঁদুর পরেন। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, সিঁদুর ব্রহ্মার প্রতীক। ব্রহ্মা জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করে আনন্দে ভরে রাখেন। মনে করা হয়, সিঁথিতে সিঁদুর পরলে কপালে ব্রহ্মা অধিষ্ঠান করেন।

এই কারণে দশমীর দিন সিঁদুর খেলার এই প্রচলন বলে মনে করেন অনেকে। গীতা অনুসারে কাত্যায়নী ব্রত উপলক্ষে কৃষ্ণের মঙ্গল কামনা করে গোপিনীদের সিঁদুর খেলার উল্লেখ পাওয়া যায়। দশমীর দিন বিবাহিত নারীরা আগে দেবীকে বরণ করেন। তার কপালে সিঁদুর ছুঁইয়ে, সেই সিঁদুর একে অন্যের সিঁথিতে দেন। মনে করা হয় এটি সৌভাগ্যের প্রতীক। সিঁদুর খেলার সঙ্গে দশমীর দিন ধুনুচি নাচের প্রথাও রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ধুনুচি নাচের মাধ্যমে দুর্গাকে তুষ্ট করা হয়। এতে দেবী মহিষমর্দিনী প্রসন্ন হন।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, সিঁদুর হলো সধবা নারীর প্রতীক। সধবা নারীরা সিঁদুর দিয়ে সংসারের জন্য কল্যাণের প্রার্থনা করেন। সিঁদুর খেলা কেন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কর্মের প্রয়োজনে নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকি। মায়ের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সংসারের সবাই একত্রিত হয়েছি। মায়ের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও আবার ছড়িয়ে যাব। এই বিদায় মুহূর্তে আমরা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি এবং সবার যেন কল্যাণ হয় তার জন্যই এ সিঁদুর খেলি। বিশেষ করে সধবা নারীরা সংসারের কল্যাণের জন্য এই সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। এটি আমাদের পারস্পরিক ঐক্য, সোহার্দ বজায় রাখার বার্তা দেয়।

তবে দশমীর দিন সব মণ্ডপেই বিবাহিত নারীদের সঙ্গে তাদের স্বামী-সন্তানরা এসেছিলেন। সাউন্ড সিস্টেমে একের পর এক বেজেছে বিভিন্ন গান। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়ে উভয়েই গানের তালে তালে নেচেছেন। অনেকে দূরে দাঁড়িয়ে গান কিংবা ঢাকের তালের সঙ্গে হাত তালি দিয়ে তাল মিলিয়েছেন। কাউকে কাউকে নাচের ময়দানে হাত ধরে টেনে নামাতেও দেখা গেছে। স্বজনের এমন অনুরোধ ফেলতে না পেরে নিজের তালেই নেচেছেন।

পুরান ঢাকার শাঁখারী ও তাঁতী বাজার এলাকায় মণ্ডপের সামনের ছোট্ট জায়গাতেও সাউন্ডবক্সের তালে তালে নেচেছেন ভক্তরা। সব কিছুরইতো শেষ আছে। এই আনন্দ আয়োজনেরও ইতি টানতে হয়েছে। এদিকে আয়োজকরাও দেবীকে ভাসানে নিয়ে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছিলেন। তাই ‘আসছে বছর আবার হবে’- এই আশ্বাসেই এবারের মতো সমাপ্ত হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App