জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার চায় বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণে উন্নত দেশগুলোকে দ্রুত কার্বন নির্গমন হ্রাসে উদ্যোগী হতে হবে এবং প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

কপ২৯-এ অনুষ্ঠিত ‘প্রাক-২০৩০ উচ্চাভিলাষ’ বিষয়ক বার্ষিক উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।? ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা মোকাবিলা করছে, তা তুলে ধরে সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগের ওপর জোর দেন উপদেষ্টা। তিনি উল্লেখ করেন, এই বছর দুটি ভয়াবহ বন্যায় দেশে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ক্ষতি হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। গত ১৮ মাসে দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ১৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বাংলাদেশের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, তবে এতে দেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২২ শতাংশ কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ২৭ মিলিয়ন টন নির্গমন শর্তহীনভাবে এবং ৬১ মিলিয়ন টন শর্তসাপেক্ষে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিজস্ব তহবিল এবং ১৩৫ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তা।

আরো পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সব আইনি পথ অবলম্বন করব

তিনি বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলোকে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) শক্তিশালী করতে হবে, বাজার পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং উচ্চমানের জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

পরে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ‘ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ মূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য বৈশ্বিক কার্যকরী ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অপর এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নেপালের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আই বাহাদুর শাহী ঠাকুরির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার প্রশমন, অভিযোজন ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে আলোচনা হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, নেপাল বাংলাদেশকে আরো জলবিদ্যুৎ দিতে আগ্রহী। এছাড়া লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার ওপর জোর দেন পরিবেশ উপদেষ্টা।