‘অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার কমেছে। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে। এতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, চলতি বছরের চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। দেশীয় ও বৈদেশিক খরচ কম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্প বাদ দেয়া হবে। এজন্য সামনে উন্নয়ন বাজেট কমবে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ১ হাজার ৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বৈদেশিক অর্থায়ন থাকছে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই কম। এতদিন দুর্নীতি রোধকল্পে কাজ করলেও এখন এডিপি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হবে। ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এডিপির আকার ছোট করা হবে। কারণ অনেক প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেসব প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অপচয় রোধ করতে গিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন ধীর গতিতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেগুলোকে ভালো প্রকল্প মনে হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে নীতি সমন্বয়ের সময় এসেছে। যেসব প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে পিছিয়ে পড়া এডিপি অনেকটা শুধরে নেয়া যাবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সমস্যা আছে বলেও জানান ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এ খাতে মানুষের বিনিয়োগের আগ্রহ নেই বললেই চলে। বিশেষ করে সুদের হার বাড়ানোর ফলে অর্থ লগ্নিতে আগ্রহ কমছে।
আরো পড়ুন: স্বর্ণের দাম কমলো, কবে থেকে কার্যকর
তিনি বলেন, অনেক প্রকল্প পরিচালক হয় পদত্যাগ করেছেন, না হয় তারা পালিয়ে গেছেন। তাই প্রকল্প চালাতে নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়েছে। বিশেষ করে মাতারবাড়ী প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে যাওয়ার আগে অনেক সরকারি সম্পদ বিক্রি করে গেছেন। তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়গুলো এখনো আগের মতো সচল হয়নি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রকল্প কমাচ্ছি, কারণ নতুন প্রকল্প ব্যয় থেকে সুফলের সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া, উদ্ভাবনী নানা প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মূলত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রূপপুর প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। বাকিটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আগে মন্ত্রী ও এমপি প্রকল্প নিতেন। কিন্তু উপদেষ্টার এলাকা কম। আমরা সবাই মিলে চিন্তা করেছি নতুন ধারার প্রকল্প নেব শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন করার জন্য। দ্রুত সময়ে কিছু নতুন ধরনের প্রকল্প তৈরি করতে পারি কিনা দেখব।
অনুমোদিত ৫ প্রকল্প : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড
নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতা বর্ধন প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ টু প্রমোট ইয়ুথ এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে মোংলাবন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ইমারজেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। এছাড়া, ব্যয় বাড়ানো ব্যতিরেকে দুটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।