×

শেষের পাতা

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর দাপট

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর দাপট
   

কয়েক বছর আগেও শুধু শহরেই এডিস মশা এবং ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব ছিল। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা এবং অসচেতনতায় এখন গ্রামেও ডেঙ্গুজ্বরে ভুগছে মানুষ। দেশের ৬৪টি জেলার চিত্র একই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এ বিষয়ে সরকারের টনক নড়ছে না। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা দেখলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় অক্টোবর মাসে। ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। আর মৃত্যু বেশি হয় নভেম্বর মাসে, ১৭৩ জন।

এদিকে বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আবার ঢাকার দুই সিটির মধ্যে উত্তর সিটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, ২১ হাজার ২৫৪ জন। তবে মৃত্যু বেশি দক্ষিণ সিটিতে, ২৩৯ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ, আর নারী ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হয়েছে নারীর। এরমধ্যে ৫১ দশমিক ১ শতাংশ নারী, আর ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ।

২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী। মশাবাহিত এই জ্বরে মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। মূলত দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। তবে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু মহামারি রূপ ধারণ করে। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩শ জনের মৃত্যু হয়।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওই বছর মারা যায় ২৮১ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জাতীয় কোনো পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। এই ভয়াবহতার শঙ্কার কথা আগে থেকে জানানো হলেও মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর কোনো দেশেই ডেঙ্গুতে এত মৃত্যুর রেকর্ড নেই। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাংলাদেশে অসচেতনতার কারণে রোগীদের দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা কম, জ্বর নিয়ে অবহেলা করার কারণে ডেঙ্গু শনাক্ত হতে দেরি হয়।

এছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে রোগীর মৃত্যু বেশি হয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকদের সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়লে আনুপাতিক হারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু হয়। কিন্তু যেসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে, সেগুলো দূর করা হয়নি। কীভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটি সবাই জানে। কিন্তু প্রতিবারই আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ ঘটাতে হবে বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা কম ছিল। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে যদি এখন থেকেই বছরব্যাপী বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে সাজানো না হয়, তাহলে ২০২৫ সালে ডেঙ্গু আমাদের আরো বেশি ভোগাবে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App