সৌদি ক্লাব আল হিলালের মোটা অঙ্কের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। মায়ামির জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে আছেন ৩৬ বছর বয়সি এই তারকা। তবে, এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে ইন্টার মায়ামি ছাড়তে পারেন এই বিশ্বকাপজয়ী তারকা। সম্প্রতি এমন এক খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ফুটবল দুনিয়ায়। বেকহ্যামের দলের সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের। তবে তিনি নাকি আর মায়ামিতে থাকতে চাইছেন না। ক্লাবের পক্ষ থেকে একাধিকবার চুক্তি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হলেও মেসি তাতে সাড়া দেননি।

২০২৩ সালে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। আড়াই বছরের চুক্তি ছিল তার। আর্জেন্টিনার এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চুক্তি বাড়ানোর বিষয়ে এখনো ইন্টার মায়ামির সঙ্গে কথা বলেননি মেসি। তিনি মায়ামি ছাড়তে পারেন। ফিরতে পারেন আর্জেন্টিনায়।

নিজের ফুটবল জীবন আর্জেন্টিনার ক্লাব নিউওয়েল ওল্ড বয়েজে শুরু করেছিলেন মেসি। সেখানেই প্রথম নজরে পড়েন তিনি। তারপর সেখান থেকে চলে যান লা মাসিয়া একাডেমিতে। ক্যারিয়ারের একেবারে শেষে আবার নিজের ছোটবেলার ক্লাব নিউওয়েলে ফিরতে পারেন মেসি। সেখানে খেলে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেন এই মহা তারকা।

মেসির আমেরিকা ছাড়া নিয়ে জল্পনা শুরু হলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ২০২৬ সালে আমেরিকায় ফুটবল বিশ্বকাপ। তার আগে সে দেশে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্যই মেসিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অনেকের মত। মেসি মায়ামিতে যোগ দেয়ার পরে সেই ক্লাবকে ট্রফি দিয়েছেন। পাশাপাশি মেজর সকার লিগের দর্শকের সংখ্যাও বেড়েছে। বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত স্পন্সরদেরও লাভ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের আগে মেসি আমেরিকা ছাড়লে সে দেশের ফুটবলের ক্ষতি হবে। তাই ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাব মেসির সঙ্গে চুক্তি আরো বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মেসি যে আর্জেন্টিনায় ফিরতে চান তা ২০১৬ সালের একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি তাকে সংশয়ে রেখেছিল। মেসি বলেছিলেন, ‘যদি আমাকে একদিন পরেই আর্জেন্টিনা যেতে হয়, আমি রাজি। নিউওয়েলের হয়ে এখনো খেলতে চাই। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ। ওরা যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সেটাই আমি চাই। আমাদের দেশের অবস্থা এখনো খুব খারাপ। রাস্তায় বেরোলে ছিনতাই হচ্ছে। কেউ কাউকে খুন করে দিচ্ছে। সেখানে আমার সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে ভাবতে হবে।’

২০২২ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পরে সে দেশের পরিস্থিতি অবশ্য বেশ কিছুটা বদলেছে। ফুটবলের হাত ধরে দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য এসেছে। আর্জেন্টিনার আর্থিক পরিস্থিতি এখন আগের থেকে ভালো। তাই হয়তো মন বদলেছেন মেসি। যদিও এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে তিনি নিজে কিছু বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ মেসিকে ছাড়বে কিনা, সেটা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টা নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে কাটান মেসি। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি সেই ক্লাবে খেলেন। এরপর তিনি বার্সেলোনায় যুব দলে যোগ দেন। সেখান থেকে ২০২১ সালে পাড়ি জমান ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে। এই ক্লাবে অবশ্য খুব বেশিদিন থাকেননি তিনি। দুই বছরের মধ্যেই যোগ দেন নতুন ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে।

মায়ামির আগে পিএসজিতে ছিলেন মেসি, ২০২১ সালে বার্সেলোনা থেকে গিয়েছিলেন প্যারিসে, সেখানেই ২০২২-২০২৩ মৌসুম কাটান। এরপর নতুন ঠিকানা হয় ইন্টার মায়ামি। গত মৌসুমে মায়ামিকে মেজর লিগ সকারের প্লে-অফে তুলেছিলেন। সেই সঙ্গে গত বছর লিগ কাপ ট্রফি জয় করেছিলেন। তবে এবার সেখানে আর থাকতে চান না।