চাপের মুখে টিউলিপ, যাচ্ছেন না চীন সফরে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০২ পিএম

ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি : সংগৃহীত
লন্ডনে উপহারের ফ্ল্যাট নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। এ অভিযোগের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে। টিউলিপ সিদ্দিকের একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের অংশ হিসাবে চীন সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে ব্রিটেনে থাকতে বলা হয়েছে। এরবদলে যুক্তরাজ্যে থেকে তদন্তের মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে তাকে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাম ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী রাখায়েল রিভিসের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের চীন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি লন্ডনেই থাকবেন। এই সময়টায় তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডের’ স্বতন্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করবেন যে, টিউলিপ ‘মন্ত্রিত্বের নীতি’ ভঙ্গন করেছেন কি না।
লন্ডনের ফ্লাটের বিষয়টি প্রকাশের পর টিউলিপের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু টিউলিপের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার টিউলিপের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে তাকে রক্ষা করতে একটি বিবৃতি জারি করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে উল্লেখ করে সম্পূর্ণরূপে সঠিকভাবে কাজ করেছেন, যা তিনি এখনো করছেন এবং এ কারণেই আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, তার প্রতি আমার আস্থা আছে এবং তিনি তা বজায় রাখবেন।
অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারের দুর্নীতি অনুসন্ধানসহ অন্যান্য দায়িত্বে আছেন। এরমধ্যে তিনি নিজেই দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছেন।
আরো পড়ুন : অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন টিউলিপ সিদ্দিক
যুক্তরাজ্যের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, কীভাবে সম্পদ গড়েছেন সেটি টিউলিপের এখনই প্রকাশ করার সময়। তার খালার করা দুর্নীতি থেকে এই সম্পদের কোনো কিছু এসেছে কি না সেটি তদন্ত করা উচিত।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টিউলিপের সম্পত্তির লেনদেন নিয়ে তদন্ত জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেয়া একাধিক সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্যের লেবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের নেতৃত্বাধীন ট্রেজারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে চীনে সফরে যাবেন না।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিংস ক্রসের কাছে দুই বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট ও হ্যাম্পস্টেডে একটি বাড়িসহ বেশ কয়েকটি সম্পত্তি নিয়ে চাপের মধ্যে আছেন টিউলিপ।
গত শুক্রবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি এক লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল এই ব্যবসায়ীর। তবে ২০০৪ সালে বিনামূল্যে ওই ফ্ল্যাটের মালিক বনে যান টিউলিপ।
সানডে টাইমস বলছে, এর আগে টিউলিপ সিদ্দিক তাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনেছিলেন এবং উপহার হিসেবে তাকে দেন। এভাবে তিনি পত্রিকাটিকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সানডে টাইমস তখন রিপোর্ট করেছিল, তিনি হ্যাম্পস্টেডের আলাদা সম্পত্তিতে বসবাস করছিলেন। ওই সম্পত্তি কিনেছিলেন মঈন গনি এবং টিউলিপ সিদ্দিকির বোনকে দিয়েছিলেন। পেশায় আইনজীবী মঈন গনির সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এছাড়া তিনি পূর্ব ফিঞ্চলে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল করিমের দুই দশমিক এক মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।