নীতীশ-নাইডুর ওপর কতটা ভরসা বিজেপির?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
ভারতে ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) মূলত একটি প্রতীকী জোট ছিল। মোদির কাছে জোট এতটাই গুরুত্বহীন ছিল যে বিজেপি তাদের অনেক পুরনো মিত্রকে হারালেও কোনো আফসোস করতে হয়নি। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট গঠনের পর বিজেপিকে জোট নিয়ে নড়েচড়ে বসতে হয়। টিডিপি ও জেডি-ইউর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দুই দলকেই। ভারতের বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর জন্য দরজা খোলা রাখবে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর এনডিএ জোটে শরিকদের আসা-যাওয়ার বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। এনডিএ জোট ইতিমধ্যে সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের চেয়ে ঢের বেশি—২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে। কিন্তু বিজেপি এককভাবে ২৪০ আসন পেয়েছে, যা প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের চেয়ে ৩২টি কম। আর এই কারণে এক দশকের মধ্যে বিজেপিকে প্রথমবারের মতো সরকার গড়তে মিত্রদের ওপর, বিশেষ করে টিডিপি ও জেডি-ইউর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই মিত্রদের প্রত্যেকে এখন বিজেপির কাছে কী দাবি করতে পারে? কারণ, বিজেপি এসব দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টিডিপি বিজেপিতে জোটে যোগ দেয়। এবার বিস্ময়কর এক জয় পেয়েছে তারা। দলটি অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৩৪ আসনে জয় পেয়েছে। একইভাবে এবার লোকসভার ১৬ আসনে জয় পেয়েছে। দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার ‘কিংমেকার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন নাইডু।
খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইন্ডিয়া জোট থেকে নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। টিডিপির প্রধান জোট সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখার বিনিময়ে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের দাবি জানাতে পারেন।
অন্যদিকে নীতীশ কুমার বারবার জোট পরিবর্তনের কারণে বিশ্লেষকেরা তার রাজনীতি নিয়ে নানা রসাত্মক কথাবার্তা বলে থাকেন। একসময় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন নীতীশ। কিন্তু বারবার ডিগবাজি দিয়ে তিনি নিজের ক্ষতিটা করেছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর সময় তিনি এনডিএ জোটের বেশ প্রভাবশালী মিত্র ছিলেন।
২০১৩ সালে তিনি এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে যান। বিহারে তার ভাবমূর্তিটা ‘সুশান বাবু’ হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তখন তাকে অনেকে বিরোধীদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনে করতেন। দুর্ভাগ্যবশত, সেটাই নীতীশের শেষ ডিগবাজি ছিল না। ২০১৭ সালে নীতীশ জোট থেকে বেরিয়ে যান। আবার ২০২৪ সালে তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দেন।
এভাবে একের পর এক ডিগবাজির কারণে নীতীশ তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এবার বিহারে লোকসভা ১২ আসনে জয়ী হয়ে তিনি সম্ভবত ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠতে পারেন। কে জানে, তিনি নিজেও ‘কিং’ হয়ে যান কি না। বিজেপিকে সরকার গঠন করতে এনডিএ জোটের তৃতীয় সর্বোচ্চ আসনজয়ী জেডি-ইউর সহায়তা লাগবে। কিন্তু নীতীশের অতীত রেকর্ড বলে দিচ্ছে, কেন্দ্রে তাঁর সমর্থনে স্থিতিশীল সরকার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আপাতদৃষ্টিতে তিনি এখন এনডিএকে সমর্থন দিলেও আবার কখন নিজের স্বার্থ আদায়ে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে মাখামাখি শুরু করেন, বলা যায় না।