জোট সরকার নিয়ে নতুন বিপদের শঙ্কায় মোদি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দল হিসেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ম্যাজিক ফিগার ২৭২ থেকে বেশ অনেকটাই পেছনে আছে নরেন্দ্র মোদির দল। ফলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ভরসা করতে হবে এনডিএ জোটের সহযোগী দলগুলির উপর। আর এটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। বলা হয়, মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসলে মোদী-শাহের সরকার। ২০১৯ সালেও এই দুই মুখই বিজেপিকে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। ফলে খাতায় কলমে এনডিএ জোট থাকলেও মোদি-শাহকে কখনোই জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করতে হয়নি।
জোটের উপর নির্ভর করতে হয়নি বলে জোটসঙ্গীদের সে অর্থে কখনো গুরুত্বও দেয়নি বিজেপি। ফলে যত দিন গেছে এনডিএ ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে একাধিক দল। পাঞ্জাবের শিরোমণি আকালি দল, শিবসেনার উদ্ধব শিবির, দক্ষিণের এআইএডিএমকে-র মতো গুরুত্বপূর্ণ দল বিজেপিকে ছেড়ে চলে গেছে। যারা থেকে গেছে, তারাও বার বার অভিযোগ করেছে, জোটের ভিতর তাদের কার্যত গুরুত্ব নেই। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের নির্বাচন তাদের সামনে নতুন পথ খুলে দিয়েছে।
বিজেপি সূত্রের বরাতে ডয়চে ভ্যালে জানিয়েছে, নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু ছাড়াও লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসওয়ানও বিজেপির উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেছেন। মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো সূত্র থেকে এমনো শোনা যাচ্ছে, নীতীশ কুমার উপ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো পদ চেয়েছেন। চন্দ্রবাবুরও চাহিদা এমনই।
মোদি-শাহের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারেন তাদের দলেরই একটি অংশ। বিজেপির সূত্রের দাবি, সংঘ-ঘনিষ্ঠ নীতিন গডকড়ীর মতো নেতারা মোদী-শাহের উপর চাপ তৈরি করতে পারেন। মন্ত্রিসভা বদলের দাবি উঠতে পারে বিজেপিরই ভেতর থেকেই। কারণ, বিজেপিরই একাংশ মনে করছে, এনডিএ জোট জিতলেও এই ভোট মোদি-শাহের বিরুদ্ধে গেছে।
ভোটের আগে ২৮টি দল নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। তাদের মোট আসন সংখ্যা ২৯৩। এর মধ্যে বিজেপি একা পেয়েছে ২৪০টি আসন। অর্থাৎ, ম্যাজিক ফিগার থেকে ৩২টি আসন কম। চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিএস) পেয়েছে ১৬টি আসন। এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ পেয়েছে ১২টি আসন। এই দুই দলই বিভিন্ন সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটে ছিল। জেডিইউ ২০২৪ এর আগে তৈরি ইন্ডিয়া জোটেও ছিল। ফলে ইন্ডিয়া জোট ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে প্রকাশ্যেই জোটের নেতারা বলতে শুরু করেছেন।
নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নায়ডু যদি শিবির পরিবর্তন করেন, তাহলে বিজেপির এনডিএ-এর কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না। তারা নেমে আসবে ২৬৫টি আসনে। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের কাছে এখন ২৩৪টি আসন আছে। জেডিইউ এবং টিডিএস-এর সমর্থন পেলে তারা পাবে ২৬২টি আসন। সেক্ষেত্রে কোনো পক্ষের কাছেই সরকার বানানোর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশল হলো, ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরানো। ইন্ডিয়ার বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিজেপি কথা বলার চেষ্টা করছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। যে কারণে, ৪ জুন রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের কোনো কোনো নেতা।
ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম মেনে সব চেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলকেই রাষ্ট্রপতি প্রথমে সরকার গড়তে ডাকবেন। সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া বিজেপিকেই ডাকা হবে, তা নিশ্চিত। এরপর সংসদে বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। আর তখনই এই সব রাজনৈতিক সমীকরণ সামনে আসবে।