দানবীয় গর্তে ভরে যাচ্ছে পৃথিবী, নতুন আতঙ্কে বিশ্ববাসী!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০১:১৯ পিএম
হঠাৎই বিকট শব্দ। প্রচণ্ড কম্পন। তারপরই ঘটছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। পায়ের তলার মাটি চোখের পলকেই ১০০ ফুট গর্তে রূপ নিল। কোথাও কোথাও তারও বেশি। ঠিক যেন ভয়ানক সিনেমার কোনো দৃশ্য! গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব প্রকৃতিতে ঠিক এমনটাই ঘটছে অনবরত। পৃথিবীর এই নতুন আতঙ্কের নাম ‘দানবগর্ত’।
বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘সিঙ্কহোল’। ধর্মবিশ্বাসীরা বলছেন ‘দোজখের দরজা’। গত এক মাসে পরপর পাঁচ দেশে দানবাকৃতির গর্ত তৈরির পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি। ঝড়-বৃষ্টি, ভূমিধসের মতোই বাড়ছে এই দানবগর্ত। রাস্তায়, খেলার মাঠে, খেতে, পুকুর বা সুইমিংপুলে কিংবা উন্মুক্ত প্রান্তরে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সিঙ্কহোলটি আবিষ্কৃত হয়েছে গেল ৬ জুন ইয়েমেনের আল মাহরা রাজ্যের মরুভূমি এলাকা বারহুতে। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘নরকের কুয়া’। ১০০ ফুট চওড়া এবং ২৫০ ফুট গভীর। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এই গর্তটি ইয়েমেনের তৎকালীন রাজধানীর সানা থেকে ৮০০ মাইল দূরে ওমান সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। গর্তটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে গল্প আছে যে-দৈত্যদের জন্য তৈরি করা কারাগার হচ্ছে এই গর্তটি। আবার কেউ কেউ বলছেন, না, এটা জাহান্নামের যাওয়ার মুখ।
জানা গেছে, এলাকাভেদে এই দানবগর্তের আকার বা গভীরতায় রয়েছে ভিন্নতা। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় দানবগর্তটি প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দানবগর্তের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে পৃথিবীতে আবারো সেটা ফিরে এসেছে। এর জন্য প্রকৃতি নয়, মানুষই দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু সংকটের সরাসরি প্রভাবেই তৈরি হচ্ছে এসব দানবীয় গর্ত।
আমেরিকা, জাপান, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, মেক্সিকো, ইসরাইল, ভারত এবং তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে হুট করেই এসব বিরাট বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ধ্বংস-যজ্ঞের নজির রয়েছে। কেউ কেউ বলতে চান, এমন দানবীয় গর্ত সৃষ্টিতে প্রকৃতি নয় বরং মানুষই প্রধানভাবে দায়ী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েক দশক এমনকি শতাব্দী পর্যন্ত লেগে যায় একটি সিঙ্কহোল তৈরি হতে। ভূগর্ভস্থ পানি অথবা খনিজ উত্তোলন করা হলে মাটির অভ্যন্তরে ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়। নিচের স্তরের মাটি যখন ভূমির উপরের চাপ নিতে পারে না তখনই ধসে পড়ে আর তৈরি হয় বিশালাকার গর্ত।
প্রকৃতিতে হঠাৎ সিঙ্কহোল তৈরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আশঙ্কাজনক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বেড়েছে খরা। কমেছে পানির স্তর। মাটি ক্ষয়, মিথেন গ্যাসের প্রভাব, অধিক হারে ভূগর্ভস্থ পানি ও খনিজ পদার্থ উত্তোলনও দায়ী। অপরিকল্পিত ভূগর্ভস্থ সুয়ারেজ লাইন বা মাটির নিচে নির্মাণ কাজকেই মনে করা হচ্ছে সিঙ্কহোল বৃদ্ধির কারণ।