মামলার ভয় দেখিয়ে নসরুল বিপুর দখলে বিলের ৫০০ বিঘা জমি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় ততটুকু জমির মালিক সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবড়ি ও মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি এলাকায় অবস্থান হামিদ রিয়েল এস্টেটের প্রজেক্ট। নরদা বিলে একটি জলাশয়ের প্রায় পাঁচশ বিঘা জমি তার দখলে। ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নতুন প্রকল্পের নাম করে হাতিয়ে নিতেন কোটি টাকা। তৈরি করেছেন অপকর্মের মাফিয়া সিণ্ডিকেট। নসরুল বিপুর দুর্নীতি শুধু বিদ্যুতখাতেই ছিল না, দখল করেছেন বিলের পর বিলের জমি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ, মামলা-হামলা ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ভয় দেখিয়ে গ্রামের সাধারণ কৃষকের এসব জমি দখল করেছেন। নরদা বিলে জমির পরিমাণ প্রায় এক হাজার একরের ওপরে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই সম্পদ গোপন করতে বিলে থাকা শতাধিক হামিদ রিয়েল এস্টেট নামের সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ত্রিশালের নরদা বিলে যতদূর চোখ যাচ্ছে তার সবটুকু জমির মালিক সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যতটুকু জমি কেনা হয়েছে তার থেকে বেশি জমি দখল করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ১৫৪ বিঘা জমির নামজারি করেছেন নসরুল হামিদ। জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় একশ কোটি টাকা। ত্রিশালের নদরা বিলে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষায় দলবেঁধে মাছ ধরতেন গ্রামের মানুষ। হতো নৌকাবাইচও। এখন যা সোনালি অতীত।
আমিরাবড়ি ইউনিয়নের রায়মনি এলাকার বৃদ্ধ রমিজা খাতুন বলেন, আমার নামে জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও জোর করে জমি দখল করে নিয়ে গেছে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে। এই জমি আমার মা আমাকে দলিল করে দিয়েছিলেন।
আমার জমিতে মাটি দিয়ে ভরাট করার পর টিনের ঘর করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাকে বাধা দিয়ে ঘর করতে দেওয়া হয়নি। বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, এই জমি দলিল হয়ে গেছে। দালালের মাধ্যমে জাল দলিল করে আমার এই সম্পদ লিখে নিয়ে গেছে নসরুল হামিদ। আমার জমি দখল করে নিয়ে গেছে।
আমিরাবড়ি ও মঠবাড়ী ইউনিয়নে নরদা বিলে থাকা এক হাজর একর জমি রয়েছে। সেই বিলের পুরো জমির নিয়ন্ত্রণ এখন নসরুল হামিদের হাতে। পুরো বিলেই নসরুল হামিদের মাছ চাষ হয়।
একই ইউনিয়নের খাগাটি গ্রামের মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ২ একর জমি জোরপূর্বক দখলে নেয়। বিষয়টি নিয়ে ভূমি অফিসে মিসকেইসের আবেদন করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নসরুল আমিন পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, ‘রাজস্ব শাখায় তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ত্রিশালের আমিরাবড়ি ও মঠবাড়ী ইউনিয়নে দুটি খতিয়ানে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর (হামিদ রিয়েল এস্টেটের মালিকানাধীন) আমিরাবড়ি মৌজায় ৪১ দশমিক ৯৪ একর জমি ও অপর একটি মৌজায় ৭ দশমিক ৭৩ একর জমি এবং মঠবাড়ী মৌজায় ১ দশমিক ২১ একর জমি নামজারি রয়েছে।’