শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেয় নওফেল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ এএম
প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের টানা তিনবারের মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি মেয়র থাকার সময় ২০০১ সালে নগরের প্রবর্তক মোড়ে যাত্রা শুরু করে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। তখনই এই প্রতিষ্ঠানটি দখল করার চেষ্টা শুরু হয়, কিন্তু ২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হলে পরিচালনার দায়িত্ব হাতছাড়া হয়। এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মারা যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১৮ সালে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোপুরি কবজায় নিয়ে নেন তিনি।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৫ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, জায়গা ক্রয় এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে ৪৩ কোটি টাকা খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু মহিবুল হাসান চৌধুরী মন্ত্রিত্বের দাপট ও ক্ষমতা দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ন্ত্রণে নেন।
৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মহিবুল হাসান চৌধুরীর পরিবারের কাছে। বোর্ডে সদস্য হিসেবে আছেন মহিবুলের মা ও ছোট ভাই। আছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তাঁর ভাই আবদুস সামাদ। আছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাবেক সংসদ সদস্য সাবিহা মুছা, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। আগে পদাধিকার বলে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হতেন মেয়র, এখন মহিবুল হাসান নিজেই।
২০১১ সালের ২২ মে তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমকে চেয়ারম্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এতে সদস্য ছিলেন সদ্য বিদায়ী মেয়র হিসেবে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও। তবে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর পরিবার।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার সময় ২০১৫ সালে ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি চিঠি দিয়েছিল। এরপরেই আরেক সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের বলে দাবি করেন এবং ইউজিসির চিঠি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। তবে, ২০১৬ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যায়ভাবে দখল করেন এবং নিজে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় যাতে আবার সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণে নেয়, সে জন্য শিক্ষার্থীরা চিঠি দিয়েছেন। এই অবস্থায় সিটি করপোরেশনের নেতৃত্ব গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।