এস আলমের নির্দেশে টাকা সরানো হতো সাদা রহস্যময়ী স্লিপে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের টাকা বের করে নেওয়া, জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের নিত্যনতুন কৌশলের তথ্য বেরিয়ে আসছে। এবার জানা গেল চেক বা পে-অর্ডার নয়; বরং ‘সাদা কাগজে হাতে লেখা স্লিপ’ দিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য। গত জানুয়ারি মাসে ইসলামী ব্যাংকের হেড অফিস করপোরেট শাখায় ৪৮ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য হাতে লেখা একটি স্লিপ দেওয়া হয়। ওই স্লিপে এস আলমের নির্দেশে অ্যানন টেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৪৮ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন ব্যাংকের তৎকালীন ডিএমডি (উপ-মহাব্যবস্থাপক) আকিজ উদ্দিন।
ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০২৩ সালের শেষদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ টাকা বের করে নেওয়ার এই অভিনব পদ্ধতি চালু করে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বড় বড় শাখায় হাতে লেখা স্লিপ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে নিত তারা। কোনোরকম বিনিয়োগ ছাড়করণ ব্যতিরেকে শুধু স্লিপের ওপর ভিত্তি করে ক্যাশ টাকা দিতে হতো এস আলম গ্রুপকে।
এর বাইরেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সচিবালয় থেকে বিভিন্ন শাখায় ফোন করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যাশ টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্থানে দিয়ে আসতে বলা হতো। শাখাগুলো সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে এই টাকা বের করে দিত, যার মাশুল এখনো গুনতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম ও তার সহযোগী বিভিন্ন গ্রুপ টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তাদের সহযোগী নাবিল গ্রুপের কয়েকটি বেনামি কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়। ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ বিতরণ নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জামানত, কাগজপত্র ও পণ্য ক্রয়ের নথিপত্র ছাড়াই ভুয়া নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে এসব ঋণ দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংকের করপোরেট ইনভেস্টমেন্ট ডিভিশনের এক কর্মকর্তা জানান, এই ডিভিশনপ্রধান ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিনের নির্দেশনা অনুযায়ী তৎকালীন ডিএমডি এবং বর্তমান এমডি মুনিরুল মওলার তত্ত্বাবধানে নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ১১ টিরও বেশি ভুয়া কোম্পানির নামে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি তুলে নেওয়া হয়।
১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি অনুসন্ধানে দুদক ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদকে প্রাপ্ত অভিযোগের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে নাবিল গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে তারা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি করেছে।
সিএসআর ও ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে টাকা উত্তোলন দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ডে অর্থের পরিমাণ অনেক। এস আলম গ্রুপ এই ফান্ড থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।