ওবায়দুল কাদের সিন্ডিকেটের ঘনিষ্ঠ ১১ জন লোক, কারা কারা?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
দেশের সড়ক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর নিজের নিয়ন্ত্রণই ছিল অন্যদের হাতে। এ সংস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা ধরনের অপকর্মের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ১১ জন ঘনিষ্ঠ লোক।
এদের সবার বাড়িই নোয়াখালী। মন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে বিআরটিএতে যোগদান করা এসব কর্মচারী গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলগুলোয় বদলি হয়ে চালিয়েছেন সব ধরনের অপকর্ম। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের প্রভাবে সেবাদাতা এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কার্যালয়েই ঘুষবাণিজ্য যেন এক প্রকার ওপেন সিক্রেট হয়ে উঠেছিল। যানবাহনের নিবন্ধন থেকে শুরু করে মালিকানা বদলি, ফিটনেস সনদ প্রদান ও রুট পারমিট পেতে প্রতিটি ধাপেই দিতে হতো কয়েক গুণ অতিরিক্ত টাকা।
টাকা না দিলে হেনস্তার শিকার হতে হতো সেবাগ্রহীতাদের। বিআরটিএসূত্র জানান, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের আমলে তারা সবচেয়ে বেশি অপকর্ম শুরু করেন। বিআরটিএর মিরপুর সার্কেলের সবকিছু জিম্মি ছিল তাদের হাতে। বিভাগীয় পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শকরা তাদের কাছে জিম্মি ছিলেন। এসব কর্মচারীর কাছে দুর্বল ছিলেন বিআরটিএর চেয়ারম্যানেরাও।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় কর্মরত কয়েকজনকে কর্মস্থল পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএর বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল দীর্ঘ সময় ওবায়দুল কাদেরের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে মূলত বিআরটিএতে কাদেরের ঘনিষ্ঠদের সেফ করতেই তাদের শুধু বদলি করেছেন। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন বিআরটিএর সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আলোচিত ১১ চেলার মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের সাবেক এপিএস মো. সেলিম ছিলেন নিয়োগ-বদলি সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এ ছাড়া বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের অফিস সহকারী হাসান বিন আদাজ, উচ্চমান সহকারী ইমদাদুল হক শামীম ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাহেদ চৌধুরী ছিলেন ঢাকার নিয়ন্ত্রক। অভিযোগ রয়েছে, এ কর্মচারীরা চাকরি জীবনের শুরু থেকেই ঢাকায় রাজত্ব করে আসছেন।
ওবায়দুল কাদেরের দাপট দেখিয়ে চট্টগ্রামে রাজত্ব করা কর্মচারীদের মধ্যে এখনো বহাল তবিয়তে থাকা রেকর্ডকিপার জহিরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২), রেকর্ডকিপার তসলিম মাহমুদ (চট্টগ্রাম জেলা সার্কেল), রেকর্ডকিপার নঈম উদ্দিন চৌধুরী অন্যতম। অভিযোগ রয়েছে, এদের সবার বাড়িই নোয়াখালী। এ কর্মচারীরা চট্টগ্রামে চাকরি করলেও সারা দেশেই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণ। কোথাও স্বজন বা কোথাও প্রভাব বিস্তার করে অধিকাংশ কার্যালয়েই সব ধরনের কাজ করতেন তারা।
বিগত সময়ে বিআরটিএর অফিসগুলোয় নোয়াখালীর লোকগুলো ব্যাপক দাপট দেখিয়েছেন। দুর্নীতিতে বাধা দিলে তারা কর্মকর্তাদেরও হেনস্তা করতেন। এসব বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিয়েও আমরা কোনো ফল পাইনি।’