স্ত্রী শাবানাকে নিয়ে রাক্ষসী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন জাহিদ মালেক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
পুরো পরিবার নিয়ে দুর্নীতির রাক্ষুসে সিন্ডিকেট গড়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত সাবেক এই এমপি। স্ত্রী শাবানা চাঁদাবাজ পালতেন। তার ছেলের ক্যাডাররা করত দখলদারি। স্ত্রী-ফুফাতো ভাই আর আত্মীয়স্বজন দিয়ে মানিকগঞ্জ সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলায় জাহিদ মালেক গড়ে তুলেছিলেন রাক্ষসী সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা) চারবারের সংসদ-সদস্য জাহিদ মালেক (স্বপন) ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জাহিদ মালেক ও তার অনুসারীরা। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকায় গড়ে তোলেন ত্রাসের রাজত্ব। জাহিদ মালেকের ক্ষমতার দাপটে স্ত্রী শাবানা মালেক হয়ে উঠেন অর্থলোভী। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনি নিজে গড়ে তোলেন পরিবহণ চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট। প্রতিদিন পরিবহণ সেক্টর থেকে চাঁদাবাজির ১ লাখ টাকা তাকে দিতে হতো।
অন্যদিকে বাবার প্রতাপে ছেলে রাহাত মালেক শুভ্র এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। দুই ভাই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কৌরাইশি সুমন ও ইরাদ কৌরাইশি ইমনের মাধ্যমে জেলায় আধিপত্য বিস্তার করেন রাহাত। দখল করে নেন এলাকার অবৈধ বালু ব্যবসা। সেই সঙ্গে দখল করেন সাধারণ মানুষের জমি। সরকারি হাসপাতালে আধিপত্য বিস্তার করে চাকরি বাণিজ্য শুরু করেন রাহাত।
অভিযোগ রয়েছে, জাহিদ মালেক আত্মীয়স্বজন দিয়ে মানিকগঞ্জ সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলায় গড়ে তোলেন রাক্ষসী সিন্ডিকেট। এর নেতৃত্বে ছিলেন জাহান মালিকের ফুফাতো ভাইসহ ঘনিষ্ঠ আত্নীয়স্বজন। তাদের মাধ্যমে দুই উপজেলায় দুর্নীতির রাজত্ব চালান জাহিদ মালেক। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে জাহিদ মালেক পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অবৈধভাবে জমি দখল, বালুমহাল, পরিবহণে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য করে দেশে-বিদেশি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, জাহিদ মালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকায় শত শত বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এসব জমি জোরপূর্বক বা নামমাত্র মূল্যে লিখে নিয়েছেন। জমি লিখে না দিলে তাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ হয়রানি করা হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ১০তলা বাণিজ্যিক ভবন, বিশাল বাগানবাড়ি, সভা-সেমিনারের জন্য ছেলের নামে ‘শুভ্র সেন্টার’, বনানীতে ১৪তলা বিটিএ টাওয়ার, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্লটসহ ১৬ বছরে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জাহিদ মালেক।
হলফনামায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা পর্যন্ত জাহিদ মালেকের সম্পদ বেড়েছে ১১ গুণ। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচনে জাহিদ মালেকের বিপক্ষে প্রার্থী হয়ে অত্যাচারের শিকার হন ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছর জাহিদ মালেক আমাকে কমপক্ষে ৬ বার আঘাত করেছেন।
অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পরিবহণ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাণিজ্য করেছেন। একক আধিপত্য বিস্তার করে অবৈধ বালু, মানুষের জমি দখল করতে গড়েছিলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। জাহিদ মালেকের অত্যাচারে মানিকগঞ্জবাসী অতিষ্ঠ ছিল। তার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।