চাঁদাবাজি, দখলবাজি কোনও কিছুই বাদ রাখেননি আওয়ামী গডফাদার শাহরিয়ার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম। ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েই হাতে পান আলাদিনের চেরাগ।
প্রথমে রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য, পরে হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ। এমনই তথ্য উঠে এসেছে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে।
২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে তাঁর শিল্পকারখানার সংখ্যা ছিল ১৯। ২০২৪ সালে শিল্পকারখানা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। মোট চারবার এমপি হয়েছেন তিনি। দশম ও একাদশ সংসদে দুইবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
শাহরিয়ার আলম রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। এর পর থেকে সব পর্যায়ে নিজের লোককে কমিটিতে আনতে থাকেন।
শাহরিয়ার আলমের সময়ে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। এজন্য নিজ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও তিনি মামলা দিয়েছেন। এসব মামলায় অনেকেই জেল খেটেছেন।
পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে বাঘা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির কমিটি গঠন করেন শাহরিয়ার। সেখান থেকে মাসে অর্ধকোটি টাকার মতো চাঁদা আদায় করত।
গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পদ গড়েছেন শাহরিয়ার। এর মধ্যে নর্থবেঙ্গল অ্যাগ্রো ফার্মস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের একটি খামার আছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। সেখানে শাহরিয়ার আলমের ৪০ বিঘার বেশি জমি রয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫ বিঘা জমি কিনে খামার গড়েছেন। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ১৩ বিঘা জমি কেনেন। রাজশাহী নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকায় তিন একরের বেশি জায়গায় বারিন্দ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠা করেন ‘দুরন্ত টেলিভিশন’নামে একটি টিভি চ্যানেল। ঢাকার গুলশানে তার নিজের নামে দুটি ও ছেলের নামে একটি এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট আছে।
শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন স্থানে বেশি দামের জমি কম দামে কিনে দখল করার অভিযোগ রয়েছে। চারঘাটের লিলি সিনেমা হলের ৩৭ শতক জমি মাত্র ৫০ লাখ টাকায় কেনেন। তার বিরুদ্ধে এক পেট্রলপাম্পের মালিকের কাছ থেকে ৪১ বিঘা জমি কিনে সাড়ে চার কোটি টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাঘা পেট্রলপাম্পের মালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য ২০২০ সালে জমিটি বিক্রি করতে চাইলে দাম ওঠে মোট ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। একজন বায়নাও করেন। শাহরিয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর কাছে জমি কেনার প্রস্তাব দেন এবং ব্যাংকঋণ পরিশোধেরও দায়িত্ব নেন। তিনি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন এবং জমি নিবন্ধনের সময় ২৫ লাখ করে দুই দফায় ৫০ লাখ টাকা দেন। এখনো তিনি তাঁর কাছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাবেন। যখনই তিনি টাকা চাইতে গেছেন, শাহরিয়ার আলম তাঁকে হুমকি দিয়েছেন।