বিলাসবহুল ৩টি জাহাজ ডিআইজি রফিকুলের স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলাম শিমুল। যিনি পুলিশের চাকরি নয়, হাতে পেয়েছিলেন যেন- আলাদিনের চেরাগ। বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি থেকে শুরু করে নিজের প্রভাব খাটিয়ে দুই যুগে অবৈধভাবে অর্জন করেছেন শত শত কোটি টাকার সম্পদ। বাবা আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে ২০০১ সালে ২০তম বিসিএসে এএসপি পদে চাকরি পান শিমুল। অথচ আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ২০০৫ সালে।
প্রভাব খাটিয়ে শুধু নিজের নামেই নয়, সম্পদ গড়েছেন তার ভাই, ভাগ্নে, স্ত্রী, শ্বশুরসহ স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়স্বজনের নামেও। দেশের বাইরে তার তিনটি জাহাজ ছাড়াও রয়েছে স্বর্ণের ব্যবসা। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি পাওয়ার পর নিজের ক্ষমতাবলে মৃত বাবাকে গেজেটভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করান রফিকুল ইসলাম।
তার আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা জানান, পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রফিক। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে। এ ছাড়া বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলেন তিনি। এই দুই প্রভাবশালীর লেজ ধরে আওয়ামী শাসনামলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার হিসেব দায়িত্ব পালন করেন রফিক। আর এ সময়ের মধ্যে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি ইউনিয়নে দেড় একর জমিজুড়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন একটি বিলাসবহুল বাড়ি। এছাড়া গোপালগঞ্জে তার নামে রয়েছে ১১৪ শতাংশ জমি। এছাড়াও তিনি রাজধানীর মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ১০ শতাংশ জমি, নিকুঞ্জে পাঁচ কাঠার প্লট, ফার্মগেটে বহুতল ফাউন্ডেশন দিয়ে গড়ে তুলেছেন চারতলা ভবন।
স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামেও গোপালগঞ্জে রয়েছে ৪৯ শতাংশ জমি। এ ছাড়াও স্ত্রীর নামে ২০২২ সালে গুলশানে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালের পাশে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ৬ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর এবং রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্লট কেনেন তিনি। এর বাইরেও নামে বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন রফিকুল। স্ত্রীর নামে আরও কেনেন ‘এমভি সি কোয়েস্ট-৩’ নামের একটি জাহাজ। শ্বশুরের নামেও কেনেন ‘এমভি সি কোয়েস্ট-১’ ও ‘এমভি সি কোয়েস্ট-২’ নামের দুইটি জাহাজ।
এছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুবাইয়ে একটি স্বর্ণের দোকানও রয়েছে রফিকুলের। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে রফিকুলের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত শত শত কোটি টাকার সম্পদের হদিশ মিলেছে। এসব সম্পদ তালিকাভুক্ত করে আদালতে জব্দের আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জব্দের আদেশ দেন।