চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বারা গঠিত 'সংস্কার কমিশনগুলো বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারে বড়সড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে কমিশনগুলো। রাষ্ট্র সংস্কারে এখন পর্যন্ত মোট দশটি কমিশন গঠন করা হলেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়গুলো।

বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তা বন্ধে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন পরিবর্তন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিধান চালু, ইভিএম বাতিলসহ বেশ কিছু আইনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।

কমিশন বলছে  সংস্কারের যে কাজ শুরু হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে আগামীতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব”। যদিও এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিদ্যমান যে সংবিধান আছে তার ভিত্তিতেই সংস্কার কাজ চূড়ান্ত করছে সরকারের বিভিন্ন কমিশনগুলো।

সংবিধান সংস্কার কমিশন এর মধ্যে যেসব পরামর্শ পেয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু।প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা কমানোসহ একজন ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করতেও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে পুলিশের নানা কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টিকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের পুলিশি কাঠামো ঢেলে সাজানোর কথা বলছে। আইনি কাঠামো সংস্কার, পুলিশের জবাবদিহিতা, পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধি, জনকল্যাণমূলক কাজে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, পুলিশের অপকর্ম রোধে নানা প্রস্তাবনাও উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্নও উঠেছে। জনপ্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে স্বচ্ছতা, প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণে উদ্যোগ, বদলি কিংবা পদায়নে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মানার মতো বিষয়গুলোও উঠে এসেছে সংস্কার আলোচনায়।

এদিকে, অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদের বাইরে সংবিধান পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। একইধরনের মতামত এসেছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও। তবে, কমিশনগুলো মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলোও হয়তো শেষ পর্যন্ত কিছু কিছু প্রস্তাবে একমত নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যদি ওই সব প্রস্তাবের পক্ষে তাদের সমর্থন জানায় তাহলেই সে সব সংস্কার প্রস্তাব গুরুত্ব পাবে এই সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে।

এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করে নির্বাচন কবে হবে সেই প্রশ্ন বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পথে হাটতে চান তারা।