স্লোগান বিকৃত করার অভিযোগ সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘোষণা

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম

পুরনো ছবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলপাড়া এলাকায় শুরু হওয়া আন্দোলনের সেসময়কার অন্যতম একটি স্লোগান 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার' বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেই স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবাদের দুই মাস পূরণ উপলক্ষে ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতি ও স্লোগানগুলোকে স্মরণ করেন শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আনদোলনের সমন্বয়ক ও বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লিখেন, 'কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না'। সেদিন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সুপ্রিমেসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।'
১৪ জুলাইকে স্মরণ করে আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম লিখেন, 'কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার!' আজ থেকে দুই মাস আগে এক পলকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি মেয়েরা আজ হলের তালা ভাঙবে, আন্দোলনে যাবে! তারপর ইতিহাস হয়ে যায়!' সমন্বয়ক আব্দুল কাদের লিখেন, 'তুমি নও, আমিও নই রাজাকার, রাজাকার'।
সমন্বয়কদের এমন ফেসবুক পোস্টে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে সমন্বয়কদের পোস্টের কমেন্টে গিয়ে 'ইতিহাস বিকৃত' করার অভিযোগ এনে এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের দাবি শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদের মূল স্লোগান 'তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার' ফোকাস করা হচ্ছে না। স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি
গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে রাজাকারের নাতিপুতি বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এবার সেই মিছিলের প্রতিবাদী স্লোগান বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে। স্লোগান বিকৃত করার অভিযোগে প্রতিবাদী মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী সিনথিয়া মেহরিন সকাল বলেন, ১৪ জুলাই রাত ১২টার আগে পর্যন্ত এবং ১৫ জুলাই রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছিলাম। যেই স্লোগানগুলো এখনো কানে ভাসে। সেগুলো অস্বীকার করার মতো না। 'তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার!' 'চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার' বলে আমরা বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে আসি। 'কে বলেছে কে বলেছে? সরকার সরকার!' -এটাও রাজুতে বসে দিয়েছিলাম। ওইদিন রাতে স্বৈরাচার শব্দটা উচ্চারিত হয় নি তেমন, দিলেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু মেয়ে দিয়েছিলো- বড়জোর ১০-১২ টা মেয়ে। 'কে রাজাকার কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার' - এটাও রাজুতে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য দেয়া হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, যেই স্লোগানটা আমাদের স্পিরিট সেই স্লোগানটাকেই ফোকাস করুন। অযথা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবেন না। একমাত্র “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার” এই স্লোগানটিই সরকারের গায়ে সেদিন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো এবং সেই রাত থেকে ইতিহাস পাল্টাতে শুরু করে।
আরো পড়ুন: একাদশের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু, করতে হবে যেভাবে
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক এবি যুবায়ের বলেন, ওই রাতে আমরা যখন স্লোগান দিয়েছি "তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার" আমাদের এগেইন্সটে ছাত্রলীগও পাল্টা স্লোগান দিয়েছে- "তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি! দুইটা স্লোগানই কিন্তু এক ধারার। শুরুতে "তুমি কে আমি কে" আছে। আর জিনিসটা এমন যে একদম ভেতর থেকে আসতো। সেজন্য ছাত্রলীগও আমাদের ডিফেন্স করতে অন্য স্লোগানের চেয়ে এই ধারার স্লোগানকেই প্রাধান্য দিয়েছে বেশি, "তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।" বৈপ্লবিক এই স্লোগানটা পুরো আন্দোলনেরই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে "কোটা সংস্কার" একপাশে রেখে আমরা পড়লাম "হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়া" নিয়ে। পরদিন থেকে আমাদের ছাত্রলীগের হাতে মার খাওয়ার সূচনাও হয় এই স্লোগান দেয়ার কারণেই! এই স্লোগানটাই এখন পর হয়ে গেলো?
উল্লেখ্য, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, তারা দাবি করছেন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিরা কোটা সুবিধা পেতে পারবেন না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।'
শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমে শিক্ষার্থীরা প্রথমে আবাসিক হলগুলোতে 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগানে প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একই স্লোগানে প্রতিবাদ করে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যে প্রতিবাদ জানান। তবে মিছিলে বিক্ষিপ্তভাবে অন্যান্য স্লোগানও ছিল।
এ সময় শিক্ষার্থীদের পুরো মিছিল জুড়ে ছিল তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার'। তবে বিক্ষিপ্তভাবে অন্যান্য স্লোগানও দিতে শুনা গেছে। অন্যান্য স্লোগানের মধ্যে রয়েছে 'কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার তুই রাজাকার', ' শেখ হাসিনার বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে', 'লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না'।