পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি। ছবি: ভোরের কাগজ
বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে উপজাতি ও বিদেশিদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা ক্যাম্প বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি 'স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট মব কিলিং এন্ড ইনজাস্টিস' ব্যানারেও পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি কর্তৃক বাঙালিদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়।
এসময় 'সন্ত্রাসীদের দমন কর, সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি কর', 'ওয়াশিংটন না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা', 'দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা' প্রভৃতি স্লোগান দেন। এছাড়াও বিক্ষোভকারীদের হাতে 'সংঘাত নয়, শান্তি চাই', পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড বানাতে ভারতীয় মদদে 'আদিবাসী' প্রচারণা রুখে দাও', 'বাঙালিদের উপর হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই' প্রভৃতি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে আমেরিকা ও ভারত যৌথভাবে মদদ জোগাচ্ছে মন্তব্য করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান বক্তারা। এসময় শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির নামে উপজাতিদের সশস্ত্র কার্যক্রমকে উস্কে দেয়া হয়েছে দাবি করে এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানান তারা।
আরো পড়ুন: এবারো একই প্রক্রিয়ায় স্কুলে ভর্তি
এসময় বক্তব্য প্রদানকালে ঢাবি শিক্ষার্থী নুরুল গণি সগির বলেন, বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি শ্রেণি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই অংশ। কেউ বাংলাদেশের কোনো অংশকে ভাঙ্গার চেষ্টা চালালে তাতে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। আমরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কোনো আপোষ করবো না। যে তর্জনী চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালাবে সে-ই তর্জনী আমরা ভেঙ্গে দেবো।
সমাবেশে তাহসিফ মাহফুজ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে নই, আমরা সেখানকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবেশি ভারত আমাদের শান্তি দেখতে পারেনা। তারা আদিবাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা জানিয়ে দিতে চাই আমরা বাঙালি নই বরং আমরা বাংলাদেশি।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর বলেন, বর্তমানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে দেশ-বিদেশ থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন প্রকাশ্যে কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে। সেখানকার উপজাতিরা বলছে ভারত যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে মার্কিন ষড়যন্ত্রও খুব স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে মার্কিন-ভারতের ষড়যন্ত্রসহ সব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে মুক্তিকামী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে রুখে দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবেশে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের সাত দফা দাবি হলো-
১. বাংলাদেশের উপজাতিদেরকে আদিবাসী ও জুম্ম এবং বাঙালিদের সেটেলার বলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করা
২. বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করা
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকুরিতে উপজাতি কোটা বাতিল করা
৪. ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করা
৫. পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া
৬. পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা ক্যাম্প বাড়ানো
৭. ১৯৯৭ সালের চুক্তি বাতিল করা
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী যোগ দেয়।