×

ক্যাম্পাস

চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধিতে অনড় ছিলেন শরিফুল হাসান শুভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধিতে অনড় ছিলেন শরিফুল হাসান শুভ

ছবি: ভোরের কাগজ

   

শরিফুল হাসান শুভ, যিনি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলো ৩৫ আন্দোলন। এই আন্দোলনে তিনি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বৃদ্ধি করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। তবে, তার সংগ্রাম শুধু আন্দোলন বা প্রতিবাদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ব্যক্তি হিসেবে যে দৃঢ়তা এবং প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছিলেন, তা তাকে আরো বেশি প্রভাবশালী করে তোলে। বিশেষত, চাকরির আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে তিনি যে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটি তাকে একটি সাহসী এবং অধ্যবসায়ী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

জেল জুলুম সহ‍্য করেও অনড় থাকা

শরিফুল হাসান শুভ তার আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনেক বাধা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে, তিনি জেলেও গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তবে, তার এই বাধা-বিপত্তি এবং জেল-জুলুম তাকে আন্দোলন থেকে পিছু হটাতে সক্ষম হয়নি। বরং তিনি আরো বেশি দৃঢ়চিত্তে তার দাবির পক্ষে অবস্থান নেন।

শুভ জানতেন যে, সরকারের কাছে ৩৫ বয়সসীমা সংশোধন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি, যা হাজার হাজার তরুণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। চাকরিতে আবেদন করার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলে, অনেক তরুণ আরো বেশি সুযোগ পাবে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে। এই বিষয়টি তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এজন্য তিনি নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক চাপ সত্ত্বেও তার আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।

অধ্যবসায়ী নেতৃত্ব

শরিফুল হাসান শুভ একাধারে একজন নেতা এবং যুদ্ধকারী ছিলেন। তার মধ্যে ছিল অধ্যবসায়, নিষ্ঠা এবং দৃঢ়তা। আন্দোলনের সময় তার একক সংগ্রাম, দমন-পীড়ন, এবং জেল-জুলুম সহ্য করার মাধ্যমে তিনি এক ধরনের সামাজিক অঙ্গীকার গড়েছিলেন। এর ফলে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য তরুণদেরও সাহস এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

যত বাধাই আসুক না কেন, তিনি কখনও তার দাবিতে ছাড় দেননি। বরং তিনি বারবার ঘোষণা করেছেন যে, যতদিন পর্যন্ত সরকারের চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর না বাড়ানো হবে, ততদিন তিনি তার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তার এই দৃঢ়তা এবং অবিচলিত মানসিকতা তাকে যুব সমাজের মধ্যে একটি আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রশ্নের দিকে ফিরে আসা: চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবিতে অনড় থাকা

শরিফুল হাসান শুভ চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবিতে অনড় ছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বর্তমান বয়সসীমার কারণে অনেক প্রতিভাবান তরুণ সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার মতে, চাকরির সুযোগের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার মাধ্যমে তরুণদের জন্য আরো অধিক সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার আন্দোলন, তার নেতৃত্ব এবং তার দৃঢ়তার কারণে অনেক তরুণ তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন এবং তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

এছাড়া, শরিফুল হাসান শুভ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আন্দোলন কেবল একটি চাকরি সংক্রান্ত বিষয় নয়, বরং এটি তরুণদের অধিকার এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার একটি বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল। তাই তিনি তার আন্দোলনকে একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছিলেন, যা শুধু সরকারকে না, দেশের সর্বস্তরের জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের এক সহপাঠি চৈতি মজুমদার বলেন, শরিফুল হাসান শুভ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি শুরু হতেই সামাজিক এবং শিক্ষাবান্ধব নানান কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি ক্লাস ক‍্যাপ্টেন থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাস মহামারির সময় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অসহায় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন, তিনি গরিব দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করে "যতদিন করোনা মহামারির প্রকোপ না কমবে ততদিন নিজে ভাতের একটি দানা গ্রহণ করবেন না" এমন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এমন মহামারীতে মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে তিনি এমন কর্মসূচি চলমান রেখেছেন। শরিফুল হাসান শুভ, যিনি তার আন্দোলন এবং সামাজিক সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, একইভাবে তার নিজ এলাকা ও স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন সম্পর্কেও গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অগ্নিবীণা আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবি তার একটি স্বপ্ন যা বাস্তবায়িত হলে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর হবে। তাকে স্বপ্নবাজবালক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, কারণ তিনি শুধু বড় বড় আন্দোলনেই নয়, বরং স্থানীয় উন্নয়ন এবং জনগণের সমস্যার সমাধানে নিজের উদ্যোগ ও নেতৃত্ব দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। তারপর নিজ এলাকায় পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধার জন্য একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি করতে। তিনি বিষয়টি লেগে থেকে ৬ মাসের মাথায়ই আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতি করান এতে জনমানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয় এবং মানুষের জনজীবনে স্বস্তি ফিরে।

এ বিষয়ে শরিফুল হাসান  শুভ বলেন, আমি ছোট বেলা হতেই নানান লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমি আমার নিজের বাস্তব জীবনের উপলব্ধি থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা পেয়েছি। আমার লড়াই সংগ্রামের মাঝে ৩৫ আন্দোলন অন‍্যতম। যখন লাখ লাখ তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তখন তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসি। 

২০২২ এর শেষে অর্থ্যাৎ ২০২৩ এর শুরুতে আমরা এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণদের সঙ্গে নিয়ে ৩৫ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। তখন পুলিশের মামলা হামলার ভয়ে কেউ মাঠে নামত পারতো না। আমরা সব বাধা অতিক্রম করে দাবি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করেছি। ৩৫ দাবির বিষয়টি বিগত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডিও লেটার এবং সুপারিশ কমিটি বার বার সুপারিশ করার পরেও দাবিটি আলোর মুখ দেখেনি। বিনিময়ে মামলা হামলার শিকার হয়েছি। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি দাবি বাস্তবায়নে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি।

৫ আগস্ট সরকার পতন হলে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের পথ কিছুটা সহজ হয়। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সেই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। আমরা আশ্বাসে বিশ্বাসী না হয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম এবং পাশাপাশি বিএনপি জামায়াত গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের লিখিত সুপারিশ সংগ্রহ করে মুহিত স‍্যারের সুপারিশ কমিটিতে উপস্থাপন করি। রাজপথে আন্দোলন এবং বিভিন্ন জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে মুহিত স‍্যারের কমিটি ছেলেদের ৩৫ এবং মেয়েদের ৩৭ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন যা ছাত্র সমাজের দীর্ঘদিনের  দাবির প্রতিফলন।

বাস্তবতা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।যেহেতু অতীতে সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তাই বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুটি বছর স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছে তাই সরকারকে ধন‍্যবাদ জানাই। যেহেতু আমাদের দাবি ছিল ৩৫ সেহেতু ৩৫ বাস্তবায়নে সরকারের সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সেই সঙ্গে আমাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার তারা আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং নির্বাচিত সরকার আসলে সংসদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীম ৩২ বিল উত্থাপনের সময় স্থায়ীভাবে ৩৫ করে দেয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এমতাবস্থায় আমার বিশ্বাস করোনা মহামারী, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানান দিক বিবেচনা করে সরকার স্থায়ীভাবে ৩৫ করে দিলে লাখ লাখ তরুণ শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতাবলে চাকিরতে আবেদনের সুযোগ পাবে, ফলে চাকরি পেয়ে পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারবে।

শরিফুল হাসান শুভ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের বেশ কিছু অংশ জেল-জুলুম সহ্য করে কাটিয়েছেন, কিন্তু তার একটাই লক্ষ্য ছিল—সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে, এবং তরুণ সমাজের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তার এই অবিচলিত মনোভাব এবং সাহসী নেতৃত্ব তরুণদের মধ্যে এক শক্তিশালী বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং তার আন্দোলন একসময় সফলতা পায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App