শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে যাওয়া বরিশালের গৌরনদীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গৌরনদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল খান ওরফে বাবলু খানকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

তার গ্রেপ্তারের খবর জানাজানি হলে এলাকার সাধারণ মানুষ আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতে রাজপথে নেমে আসেন। গৌরনদী উপজেলা ও পৌর এলাকার সাধারণ জনগণের ব্যানারে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এলাকাবাসী একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ উপজেলা সদরের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা, বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী ও গৌরনদী মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া মো. বাবুল খান ওরফে বাবলু খান (৪২) উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের মৃত জয়নাল খানের ছেলে। সে গৌরনদীর দানব খ্যাত সাবেক পৌর মেয়র ও সন্ত্রাসের গড ফাদার মো. হারিছুর রহমানের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম সদস্য ও এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। সে এলাকায় খুন, যখম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক সেবন ও বেচাকেনাসহ নানা অপরাধ কর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শেখ হাসিনার অবৈধ শাসন আমলে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী রুমান ফকির হত্যাকাণ্ডেও সে সরাসরি জড়িত। তখন সে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সন্ত্রাসী সান্টু ভূঁইয়ার অন্যমত সহযোগী ছিল। গত এক যুগেরও বেশি সময় নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে সে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচিতি অর্জন করেছে। একই সঙ্গে গৌরনদীর দানবখ্যাত মেয়র হারিছের অন্যমত সহযোগী গৌরনদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান শামীমের বডিগার্ড হিসেবে এলাকায় তার বেশ পরিচিতি আছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরসহ তাদের ওপর হামলা ও শারীরিক নির্যাতনেও নেতৃত্ব দিত সন্ত্রাসী বাবলু খান। সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকাল এর গৌরনদী প্রতিনিধি খোন্দকার মনিরুজ্জামান মনিরের ওপর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সান্টু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দলেও ছিল ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবলু খান। হামলাকালে তারা সাংবাদিক মনিরের দুই পা পিটিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে।

শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবলু খানকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে থানার এসআই মো. মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার মোল্লাবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এরপর তাকে নিয়ে পুলিশ তার অস্ত্রধারী সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টায় অভিযান চালায়। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে থানায় এনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে ১টি চাঁদাবাজি মামলা, ১টি ভূমি দখলের মামলা ও এক বিএনপি কর্মীর ওপর হামলা ও মারধরের ১টি মামলাসহ মোট ৩টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ভূমি দখলের মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।