মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার সময় ১ হাজার টাকা করে আদায় করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রধান শিক্ষকের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করা না হলে আগামী এসএসসি পরিক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলে ভয় দেখানো হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে খোঁজখবর নিতে কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তখন প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে দেন, তারা যেন ওই কর্মকর্তাকে বলেন- উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক কোনও বাড়তি টাকা নিচ্ছেন না।

সরকার ঘোষিত পরিপত্রে নির্দেশনা রয়েছে, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই টিউশন ফি আদায় করা যাবে না। তাই এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলীর নির্দেশে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার সময় রশিদ বইতে বেতন বা টিউশন ফি না লিখে সুকৌশলে পরীক্ষার ফি বাবদ ৪০০ টাকা, উন্নয়ন/বিদ্যুৎ বিল ১৮০ এবং বিবিধ বিল ৪২০ টাকাসহ মোট ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আর উপবৃত্তিবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কতিপয় অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক মো.জিন্নত আলী গত এসএসসি পরিক্ষার সময়ও ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেছেন। ওই সময় কিছু শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন তাদের।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক আবুল বাশার, বাদল মিয়া ও আব্দুল কালাম জানান, দিনমজুরি করে তারা অতিকষ্টে সংসার চালান। সরকারের দেয়া উপবৃত্তির উপর ভরসা করে সন্তানকে শিক্ষিত করার আশায় গার্লস স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যেভাবে ছাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করছেন; তাতে মনে হচ্ছে সন্তানদের আর পড়ালেখা করাতে পারবেন না। এই প্রধান শিক্ষক টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (টকা আদায়কারী) মো. শাজাহান মোবাইল ফোনে বিরক্তির স্বরে জানান, এ বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলবেন না। ধমকের স্বরে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, প্রয়োজন হলে স্কুলে আসেন। সামনাসামনি কথা হবে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলীকে এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে চেয়ার থেকে উঠে মোটরসাইকেল নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এ কারণে তার বিস্তারিত বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা জানান, দৌলতপুর এবং শিবালয়ের দায়িত্ব একসাথে পালন করার ফলে তার ওপর চাপটা একটু বেশি। তবে শিবালয়ে যিনি একাডেমিক সুপারবাইজার রয়েছেন তার কাছে এ তথ্যটি থাকা উচিত ছিল। যাহোক আপনার মাধ্যমে তথ্যটি পেয়ে ভালো হলো। অবশ্যই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।                                                                                                                                                                           শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি ম্যাসেজ তার কাছে রয়েছে। যে বাড়তি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে সম্পর্কেও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমীর হোসেন জানান, বিধিবহির্ভূতভাবে কোনও শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার কোনও সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যদি উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে থাকেন অবশ্যই তাদেরকে এ টাকা ফেরত দিতে হবে। ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, টাকা আদায়ের রশিদসহ আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুধু উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী নয়, কোনও শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই বাড়তি টাকা গ্রহণের কোনও সুযোগ নেই।