ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস বিক্রিতে অর্থ পাচারের অভিযোগ, তদন্তে দুদক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়। ফাইল ছবি
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার (৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬ শেয়ার) ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের প্রকৃত সম্পদ মূল্য ৯৪৫ টাকার বেশি হলেও প্রায় আড়াই গুণেরও বেশি দামে এই শেয়ার বিক্রির চুক্তি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের আয়োজন চূড়ান্ত। এই অস্বচ্ছ লেনদেনের কেন্দ্রে রয়েছে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, যার চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ঘনিষ্ঠ সাবেক ক্ষমতাসীন দলের ঝিনাইদহ জেলার সহ-সভাপতি ও ডামি নির্বাচনের সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত মোঃ নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
এই প্রক্রিয়ায় ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর রহস্যজনক নীরবতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি নিবন্ধকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
নোভার্টিসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের প্রকৃত সম্পদ মূল্য ছিল ৯৪৫ টাকা ৭৩ পয়সা। সেই হিসাবে, বিক্রি হতে যাওয়া ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬টি শেয়ারের মোট ন্যায্যমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। কিন্তু এই শেয়ার বিক্রি করার জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, কোন অদৃশ্য মাপকাঠিতে ৯২ কোটি টাকার শেয়ারের দাম ২৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলো? অভিযোগকারীদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত “অতিমূল্যায়িত” চুক্তি, যার মাধ্যমে শেয়ারের মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বিক্রেতাকে পরিশোধ করা হবে, যা পরে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে বিদেশে চলে যাবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেওয়া এক অভিযোগে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়াটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই পরিস্থিতিতে, পুরো প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে ১৯ জুন, ২০২৫ তারিখে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুজ্জামান এই নোটিশটি প্রেরণ করেন। নোটিশটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান, বিসিআইসির চেয়ারম্যান এবং আরজেএসসির রেজিস্টার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ৯টি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে ।
নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, নোভার্টিস এজি এবং রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বা শেয়ার ক্রয় চুক্তির বিষয়বস্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসি পর্যালোচনা না করেই শেয়ার হস্তান্তরে সম্মতি দিয়েছে। এর ফলে সরকারের আর্থিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নোটিশে আরও অভিযোগ করা হয়, এই লেনদেনটি বিদেশে অর্থ পাচারের একটি কৌশল হতে পারে এবং জনগণের টাকা ব্যবহার করে পূর্ববর্তী “ফ্যাসিস্ট সরকার” এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে । স্বাধীন অডিটের মাধ্যমে শেয়ারের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে এবং সেই প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন ও রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হবে আবেদন করা হয়েছে।