২ কোটি মানুষের জীবিকায় টান

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
দেশের আবাসন খাতে মন্দা চলছে, যা অনেক মানুষের জীবিকা ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক পরিবার ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে তারা বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
ব্যাংক ঋণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডেভেলপারদের দুরবস্থা, নিবন্ধন ফি ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি কমে গেছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব জানিয়েছে, গত এক বছরে ফ্ল্যাট বিক্রি ৫০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় রড, সিমেন্ট, বালু, ইটের মতো উপকরণের দামও বেড়ে গেছে, যা খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
একই সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো সংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আবাসন খাতে বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবিকা বিপদগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত এবং কর বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আবাসন খাতে মন্দার ধাক্কা লাগছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তৈরি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) নিয়ে নানা জটিলতায় আবাসন খাত খাদের কিনারায় অবস্থান করছে। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে এ খাতের ব্যবসায় মন্দা চলছে। এর ওপর সরকার পরিবর্তনের প্রভাবে আরও ধাক্কা লেগেছে। এতে জীবন-জীবিকায় টান পড়েছে অন্তত দুই কোটি মানুষের।
আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, জমি বিক্রেতা থেকে শুরু করে নির্মাণশ্রমিক (রাজমিস্ত্রি ও তাদের সহকারীরা) এবং ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, টাইলস ও ফিটিংসসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কারখানায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ কর্মরত। এ অর্ধকোটি পরিবারের জীবিকা নির্মাণ খাতের ওপর নির্ভর করে। এখানে সমস্যা দেখা দিলে প্রতিটি পরিবারে গড়ে চারজন সদস্য হিসাবে অন্তত দুই কোটি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার হারুন শিকদার জমানো টাকায় কয়েকবার ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করেও বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না। আবার অনেকে ব্যাংক ঋণের জটিলতার কারণেও ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
রাজধানীতে ইট-বালু ও খোয়ার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন বেচাকেনা নেই বললেই চলে। এক বছর আগের তুলনা করলে বর্তমানে বিক্রি ৩০ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, উচ্চ নিবন্ধন ব্যয় ও সুদের হার বৃদ্ধি এবং নতুন ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক ড্যাপের কারণে দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন। নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে সমস্যা হওয়াতে তলানিতে এসে ঠেকেছে ফ্ল্যাট তৈরি। এই মুহূর্তে আবাসন খাতের কয়েকটা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা নতুন বৈষম্যমূলক ড্যাপ। এজন্য দ্রুত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) সংশোধন করে ২০০৮-এর বিধিমালা কার্যকর করতে হবে।