সস্তায় পণ্য কেনার লড়াই

মরিয়ম সেঁজুতি
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : ভোরের কাগজ
রাজধানীর মগবাজারের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের কাজ করেন করিম মিয়া। বরিশালের এ মানুষটির ঢাকায় বসবাস প্রায় দুই যুগ ধরে। বেতনভাতা যা পান তা দিয়ে তিন মেয়েসহ ৫ জনের সংসার চলে কষ্টেসৃষ্টে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পড়েছেন ঘোর বিপাকে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে খোঁজ রাখেন- কখন আসবে টিসিবির ট্রাক। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ট্রাকের দেখা মিললে লম্বা লাইনে দাঁড়ান। ভাগ্য ভালো হলে পণ্য নিয়ে ঘরে ফেরেন। আবার কখনো কখনো খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে। নি¤œ আয়ের এ মানুষটির সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটে টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায়। এতে ব্যাঘাত ঘটছে কাজের। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে চাকরি হারানোর।
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আলী একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে কাজ করেন। তার অবস্থা করিম মিয়ার চেয়ে কিছুটা স্বচ্ছল। কিন্তু নিতপণ্যের দাম বাড়ায় যা বেতন পান তা দিয়ে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। তাই টিসিবির ট্রাকের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হন মাসুদ আলী। টিসিবির পণ্য নিতে গিয়ে যাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাদের মাধ্যমে খোঁজ রাখেন কবে ট্রাক আসবে। যেদিন ট্রাকের জন্য বের হন সেদিন যেখানে কাজ করেন, সেখান থেকে অনুনয়-বিনয় করে ছুটি নিয়ে আসতে হয় তাকে।
মালিবাগ মৌচাক মার্কেটসংলগ্ন সড়কে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়ানো সাবেরা খানমের (আসল নাম নয়) মুখ ঢাকা হিজাবে। এ প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে প্রথমে রাজি হননি। পরিচয় প্রকাশ না করার আশ্বাস দিলে জানান, বাসা রামপুরা এলাকায়। সংসারের জন্য জরুরি কিছু কেনাকাটা করতে এসেছেন মৌচাক মার্কেটে। টিসিবির ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বলেন, এখন চেনা কারো সঙ্গে দেখা না হলেই হয়। দীর্ঘশ্বাস চেপে দুই সন্তানের জননী সাবেরা জানান, স্বামী চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেতনও ভালো। সচ্ছল সংসার। স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনে পড়ে বাচ্চা দুটি। পরিবর্তিত পেক্ষাপটে স্বামীর অফিসে সমস্যা হয়েছে। তাই বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বাসা বাড়া, বাচ্চাদের পড়ার খরচ; তার ওপর জিনিস পত্রের দাম দিন দিন বাড়ছেই। সংসার আর চলছে না। তাই সস্তায় তেল ডাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চেনা কেউ দেখে ফেললে লজ্জা পাবেন, স্বামী জানলেও কষ্ট পাবেন। তাই মুখ ঢেকে নিয়েছেন হিজাব দিয়ে। এখন পণ্য কিনতে পারলেই হয়।
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে সীমিত আয়ের মানুষের লাইন
দীর্ঘ হচ্ছে। সকাল থেকে নানা বয়সি মানুষের অপেক্ষা টিসিবির তেল ডাল পেঁয়াজ আলুর জন্য; বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। নি¤œ আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল কেনার সুযোগ করে দিতে প্রতিদিন রাজধানীর অর্ধশত জায়গায় ট্রাক সেল কর্যক্রম চালাচ্ছে টিসিবি। তবে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই পণ্য কিনতে পারছেন না। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনে কুলিয়ে ওঠার জন্য সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মহার্ঘ ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে অবসরে গিয়ে পেনশনভোগী কর্মকর্তা-কমর্চারীরাও পাবেন এ সুবিধা। অর্থাৎ পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সবাই এ মহার্ঘভাতা পাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা বাড়লে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ফলে নি¤œ আয়ের মানুষের উপরে চাপ বাড়বে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন হলে বাজারে মানি সার্কুলেশন বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে তাদের ওপরে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এ মুহূর্তে কেন মহার্ঘ ভাতা দেয়ার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে- তা আমার মাথায় আসছে না। কারণ বিগত সরকারের আমলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্তে যেন বাজারে চাপ না বাড়ে সে বিবেচনা রাখতে হবে। নাজের হোসাইন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চারমাস হয়ে গেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। যা আছে তা বিগত সরকারের আমলে তৈরি করা। তিনি আরো বলেন, দিন দিন সাধারণ মানুষের আয় কমছে, বিপরীতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে ব্যয় বেড়েই চলছে। স্বস্তি পেতে আগের সরকারের তৈরি করা ওএমএস এবং টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এ নিয়মে সাধারণ মানুষের কষ্ট কতটা লাঘব হবে- সেটাই ভাবনার বিষয় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। ক্যাবের এ নেতা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সবার প্রত্যাশা ছিল ভোগ্যপণ্যের দাম কমবে। বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। সিন্ডিকেট ভাঙবে। জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণের কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময়ের স্বীকৃত চাঁদাবাজরা পালিয়েছে। কিন্তু নতুন চাঁদাবাজের জন্ম হয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট এখনো ভাঙেনি। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর হতে পারেনি। যে কারণে পণ্যের দাম এখনো না কমে বরং বাড়ছে। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর না হলে রোজার মাসকে কেন্দ্র করে পণ্যবাজার আরো বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক চাপ আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত মাসে তা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশে। তিন বছর ধরে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সব ধরনের পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় জনগণের অর্থনৈতিক চাপ আরো বেড়েছে।
যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার কিংবা কমানো হয়েছে। ভোক্তা অধিকার দিয়ে বাজারে নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব উদ্যোগে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনার অন্য সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত না করে শুধু গুটিকয়েক উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দরকার সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা। আর সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে সরকারকে সব পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। উৎপাদন ও আমদানি বাড়িয়ে বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সরকারের কোনো লক্ষণীয় পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক বলেছেন, অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছেন। এর মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষ দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছেন। এছাড়া ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, ধারাবাহিক মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া অতিরিক্ত টাকা সরবরাহের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পক্ষে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় তো কেবল সরকারি কর্মীদের বাড়েনি; দেশের সব নাগরিকেরই বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হলে বাজারে টাকার পরিমাণ বাড়বে। ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে কতটা প্রভাব পড়বে তা কী পরিমাণ মহার্ঘ ভাতা বাড়াবে তার ওপরে নির্ভর করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৪ লাখ। ধরে নিলাম, গড়ে প্রতি পরিবারে পাঁচজন হলে ৭০ লাখ মানুষকে মহার্ঘ ভাতা দিয়ে সরকার স্বস্তি দেবে। ধরে নিলাম, আরো ৭০ লাখ বিত্তবান মানুষ আছে, যারা মূল্যস্ফীতির আঁচ টের পাবেন না। কিন্তু এর বাইরে যে ১৫ কোটি মানুষ আছে, তাদের কী হবে? গোলাম রহমান বলেন, মহার্ঘ ভাতা যত কম লোককেই দেয়া হোক না কেন, বাজারে তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষকে আরো বেশি কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়বে। তিনি আরো বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার দোহাই দিয়ে সরকার যখন মহার্ঘ ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কী। টিসিবির ট্রাকের সামনে নারী-পুরুষের সারি আরো দীর্ঘ হচ্ছে। আগে দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরাই কম দামে চালসহ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়ার জন্য লাইন দিতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, সেই লাইনে ‘ভদ্রলোকরাও’ যোগ দিচ্ছেন। তবে লাইনে দাঁড়ানো সব মানুষ চাল পাচ্ছেন, তা-ও নয়। কেউ কেউ খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
গোলাম রহমান বলেন, বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের অবস্থা আরো শোচনীয়। তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বেধে দেয়া হলেও বেশির ভাগ বেসরকারি খাতে ন্যূনতম মজুরি কিংবা চাকরিবিধি বলতে কিছু নেই। নিয়োগপত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা গ্র্যাচুইটি বলতে কিছু নেই। মালিকের মর্জির ওপরই তাদের চাকরি থাকা না থাকা নির্ভর করে। মূল্যস্ফীতির খড়গ থেকে সাধারণ ও নি¤œবিত্ত মানুষকে বাঁচাতে সরকারের সেই অর্থে পদক্ষেপ কই? দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু পণ্যের শুল্ক কমানো ও বাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রভাব তো বাজারে পড়ল না। জ্বালানি তেলের মূল্য যে হারে কমানো হলো তাও সন্তোষজনক নয়। সারের দাম কমালেও কৃষকেরা উপকৃত হতেন, যেহেতু কয়েক দফায় বন্যায় তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরাও তেমন কোনো প্রণোদনা পেলেন না। এই সব মানুষদের কথা কে ভাববে?
টিসিবির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্পটে (জায়গায়) টিসিবির ট্রাক সেল কর্যক্রম চলছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪০০ জনকে দুই কেজি তেল ও দুই কেজি মসুর ডাল দেয়া হচ্ছে। টিসিবির ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর বাইরে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ট্রাকে বিক্রি কার্যক্রম চালানো ব্যক্তিরা বলছেন, বিক্রির জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তার পুরোটাই বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দের তুলনায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন অনেক বেশি মানুষ। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই পণ্য কিনতে পারছে না।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। ট্রাকে থাকা এক বিক্রয়কর্মী জানান, মানুষ যে হারে লাইনে দাঁড়াচ্ছে তাতে সবাইকে পণ্য দেয়া সম্ভব হবে না। ওসমান নামের ওই বিক্রয়কর্মী বলেন, আমরা ৪০০ জনকে মাল দিতে পারব। তারপর যারা লাইনে থাকবেন তাদের ফিরে যেতে হবে। আমরা ৪০০ জনের বেশি দিতে পারব না। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে টিসিবির ট্রাকেও এই বিক্রি কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে। তবে এখানে যখন বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়, তখনো লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ১০০ মানুষ। তারা হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যান। টিসিবির পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়া হাফিজা নামের একজন বলেন, ট্রাক আসার আগে থেকেই আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার আগে অনেকেই লাইনে ছিলেন। দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড়ানোর পরও কিছুই কিনতে পারলাম না।