×

বিনোদন

মৃত্যুর ৫ বছরেও অমলিন 'প্লেব্যাক সম্রাট' এন্ড্রু কিশোরের সুরের যাদু

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

মৃত্যুর ৫ বছরেও অমলিন 'প্লেব্যাক সম্রাট' এন্ড্রু কিশোরের সুরের যাদু

প্লেব্যাক সম্রাট’ খ্যাত কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর। ছবি : সংগৃহীত

আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে, ২০২০ সালের ৬ জুলাই বাংলা সংগীতাঙ্গনের এক বিস্ময়কর কণ্ঠ থেমে গিয়েছিল চিরতরে। ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ খ্যাত কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়ে রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত, অমর সৃষ্টিকর্ম এবং এক অপূরণীয় শূন্যতা। তবে তাঁর মৃত্যু তাঁকে থামাতে পারেনি—এখনও তাঁর গান বাঙালির হৃদয়ে সমান সজীব, স্পন্দিত।

অমর গানের ধারা

এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে, নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে রিমেক হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয় নিরবিচারে। তাঁর কণ্ঠের যাদু যেন সময়কে হার মানিয়ে আজও বাঙালির আত্মায় মেখে আছে।

‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘তুমি আমার জীবন’ কিংবা ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’—এ রকম অগণিত গানই প্রমাণ করে, বাংলা গানকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

এক প্লেব্যাক সম্রাটের উত্থান

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর ভালোবাসা লালন করতেন। সংগীতে তাঁর প্রাথমিক হাতেখড়ি হয় সংগীত শিক্ষক আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে সংগীতজীবন শুরু করলেও মূলত চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গেয়েই তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনপ্রিয়।

১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটির মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে অভিষেক ঘটে তাঁর। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এক দশক পর এক দশক তিনি রাজত্ব করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের গানে।

সব গানের সমান পারদর্শী

রোমান্টিক, বিরহ, দেশাত্মবোধক, লোকগীতি—সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অনবদ্য স্বাক্ষর। যে কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'প্লেব্যাক সম্রাট'। তাঁর গায়কীতে ছিল আবেগের সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা, কণ্ঠে ছিল মাধুর্য আর শক্তির অনন্য মিশেল।

এন্ড্রু কিশোর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়কের সম্মান লাভ করেন। এসব পুরস্কার শুধু সংখ্যা নয়, বরং তাঁর দীর্ঘ সংগীতযাত্রার নিঃশব্দ স্বীকৃতি।

ব্যক্তিত্ব ও বিনয়েও অনন্য

শুধু শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও এন্ড্রু কিশোর ছিলেন বিনয়ী, বন্ধুবৎসল ও সজ্জন। সহশিল্পী, সংগীত পরিচালক, সাংবাদিক কিংবা ভক্ত—সবাই তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে শুধু একজন কণ্ঠস্বর হারাইনি, হারিয়েছি একজন প্রাণবন্ত ও মার্জিত ব্যক্তিত্বকেও।

২০১৯ সালে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হন এন্ড্রু কিশোর। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান, যেখানে তাঁর সম্মানে আয়োজিত হয় ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামে এক আবেগঘন সংগীতানুষ্ঠান। অসুস্থ শরীরেও তিনি হুইলচেয়ারে বসে গান গেয়ে ভক্তদের কাঁদিয়ে ফেলেন।

২০২০ সালের ৬ জুলাই, রাজশাহীর মহিষবাথানে বোনের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান শিল্পী। রেখে যান স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা ও অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসা।

আজও অমলিন তাঁর কণ্ঠ

প্রয়াণের পাঁচ বছর পরেও এন্ড্রু কিশোরের গান আজও সমান প্রাসঙ্গিক, সমান আবেদনময়। তাঁর গান বেজে ওঠে টেলিভিশনের পর্দায়, মঞ্চের আয়োজনে কিংবা কোনো একাকী সন্ধ্যায় কারও স্মৃতির গহীনে। তিনি যেন আজও বেঁচে আছেন, তাঁর কণ্ঠে, তাঁর সুরে, তাঁর ভালোবাসার গানে।

একটি ধ্রুবতারা

অ্যান্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পীরা যুগে যুগে জন্ম নেন না। তাঁর সংগীত, তাঁর কণ্ঠ ও সৃষ্টির প্রতি দায়বদ্ধতাই তাঁকে বাংলা সংগীতের ইতিহাসে ধ্রুবতারা করে রাখবে। তিনি নেই—এই সত্য মেনে নেওয়া কঠিন হলেও, তিনি আছেন প্রতিটি শ্রোতার হৃদয়ে, প্রতিটি গানে। তাঁর সৃষ্টি তাঁকে অমর করেছে—আজ, আগামীকাল এবং চিরকাল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার সংসদ : নাহিদ ইসলাম

৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার সংসদ : নাহিদ ইসলাম

ধুন্দলের যত উপকারিতা

ধুন্দলের যত উপকারিতা

চিপায় পড়ে ভালো ব্যবহার করছেন ডিসি-এসপিরা: হাসনাত আব্দুল্লাহ

চিপায় পড়ে ভালো ব্যবহার করছেন ডিসি-এসপিরা: হাসনাত আব্দুল্লাহ

জুলাই সনদ কী, এ নিয়ে এত আলোচনা কেন?

জুলাই সনদ কী, এ নিয়ে এত আলোচনা কেন?

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App