নাঈম সালেহীন
গত ১৫ বছর নতুন ব্যবসায়ীদের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম

নাঈম সালেহীন
তরুণ ব্যবসায়ী নাঈম সালেহীন। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর কর্ম জীবন শুরু করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। এরপর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন জাপান ও সিঙ্গাপুরে। পরে দেশে ফিরে শুরু করেন আবাসন ব্যবসা। বর্তমানে রিমঝিম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন নাঈম সালেহীন।
প্রশ্ন: ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলো। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এটা কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি আপনি দেখেন যে, এখানে একটি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। আসলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানই বলবো। এর মাধ্যমে ১৬ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি আসলে খুব পজেটিভলি দেখতে চাই। বিগত ১৬ বছরে নতুন ব্যবসায়ী চালু করার পরিস্থিতি ছিলই না। এখন যদি মনে করি যে, যারা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত সব করবে, তাদেরই সব কিছু থাকবে। নতুন যারা আসছে তাদের মেধা বা কর্মস্পৃহা থাকার পরই তাদের ওপর একটা চাপ ছিল। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। আমি মনে করছি, এখন সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরি হবে। এবং আমরা যারা উদীয়মান ব্যবসায়ী আছি আমরা আশা করছি সামনে আমাদের নতুন কিছু একটা হবে- ইনশাল্লাহ। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী। ওনাকে আমরা আমরা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার করতে পারবো। বিষয়টা নিয়ে ব্যবসায়িক মহল আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, যারা বিগত ১৬ বছর যোগ্যতা থাকার পরও পারেনি, তারা বেশি আশাবাদী। মানুষের যে ধারণা ব্যবসায়ীদের প্রতি, এটা তারা ভেঙে দিতে পারবে। এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এই সরকারের প্রতি আপনাদের প্রত্যাশা কী?
উত্তর: এই সরকারের প্রতি প্রত্যাশা অনেক। দেশের বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো না। বিগত সরকার বা স্বৈরাচার সরকার আমাদের অর্থনীতির যেভাবে ১২টা বাজিয়েছে। তারা ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করছে। ব্যবসায়ী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কার খুব জরুরি। ব্যাংকিং সেক্টর যদি সঠিকভাবে সংস্কার করা যায়, যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে , সেক্ষেত্রে ভালো অর্থনীতিকে ভাল অবস্থায় নিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। এখানে আরও কথা হচ্ছে, বিদেশ বাংলাদেশ থেকে যে অদক্ষ জনশক্তি যাচ্ছে, তাতে লাভ কম হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় দের কোটি মানুষ বিশে^র বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। এর আগেও সরকারের সঙ্গে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আলোচনা যখন হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি, যদিও আমরা সেখানে খুব বেশি সহযোগীতা পাইনি। আপনি মধ্যপ্রাচ্যের কথাই ধরেন, যেখানে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ প্রবাসী কাজ করছে। তারা রেমিট্যান্ট পাচ্ছে, সংসার চালানোর জন্য যেটা দরকার হচ্ছে সেটা পাঠাচ্ছে। কিন্তু ওখানে যারা একটু ভালো করছে, দেখবেন তারা বাড়ি কিনে ফেলছে। কিন্তু তাদের তো সিটিজেনশিপ দিচ্ছে না। তো আজ হোক বা কাল হোক তাদের ফিরে আসতেই হবে। ভালো আবাসন ব্যবসায়ীদের যদি প্রমোট করা যায়। আমি বলছি না, আপনি সবাইকে দেন। যারা গত ৭/৮ বছরে ভালো কাজ করেছে, তাদের। প্রবাসী যে রেমিট্যান্স আর্নার আছে, তাদের বাসস্থানের জন্য প্রোমোট করেন। যদি তাদেরকে প্রোমোট করা হয়, আমার বিশ্বাস এখানে আরও একটা রেমিট্যান্সের জোয়ার আমরা আনতে পারবো। আমাদের দেশে বর্তমান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো রেমিট্যান্স আনার প্রথম সারিতে কাজ করছে, প্রবাসীরা কাজ করছে। এর পাশাপাশি আরও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ট্যুরিজমকে আসতে হবে, আবাসন ব্যবসাকে আসতে হবে। এগুলোকে যদি এগিয়ে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমরা আশাবাদী, এই দেশে ভালো একটা দিন দেখতে পাবো। এবং আমাদের দেশ ন্যাচারাল বিউটি। এখন আপনি আবাসনকেও ন্যাচারালকেও এনগেইজড করতে পারেন। কোন একটা কারণে আবাসন থেকে আমরা ন্যাচারালকে দূরে রেখেছি। আমরা আধুনিক আমলের ব্যবসায়ী, আমরা চাই না ন্যাচারাল ধ্বংস করে আবাসন হোক। আমরা চাই ন্যাচারাল দিয়েই আবাসন হোক। আপনি ওমানে যদি খোঁজ নেন, মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটা কান্ট্রির নাম বলতে পারবো। কাতারেও যদি খোঁজ নেন, দেখবেন। রুহ্ম মরুভূমি ও পাহাড়, তার মধ্যে খুব সুন্দর করে একটি বাড়ি বানিয়ে রেখেছে। এবং ওটা তারা আন্তর্জাতিক মার্কেটে বিলিয়ন ডলার বিক্রি করছে। ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনোমিতে যাওয়ার জন্য যেসব ফ্যাসিলিটিস বা ইনফ্যাকচার দরকার কিন্তু তা আমাদের নেই। ভবিষ্যতে যদি আপনি কক্সবাজারকে সাজাতে পারেন বা সুন্দর করে তুলে ধরতে পারেন। তাহলে ওখান থেকে ট্রিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। সুতরাং ন্যাচারকে যুক্ত করে যদি ব্যবসায়ীদেরকে সুবিধা দেয়া হয়। নতুন জেনারেশনের যে আবাসিক ব্যবসায়ীরা আছেন তাদের কথা যদি শোনা হয় এবং তাদের যদি গুরুত্ব দেয়া হয়। তাহলে আমার বিশ্বাস এখান থেকে ভালো একটা কিছু করা যায়।
প্রশ্ন: অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন কোন পদক্ষেপগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নেয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছেন তারা মোটামুটি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা জানেন ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কী ভয়ংকর অবস্থা ছিল। এ জন্য আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা খুব দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করছে। এবং খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আমরা লক্ষ্য করছি। কিন্তু এখনো পুরোপুরিভাবে ঠিক হয় নি। থানা গুলি ধীরে ধীরে ফাংশন করা শুরু করেছে। মানুষকে পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে হবে, যেটা সবার আগে দরকার। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। এবং এর পাশাপাশি বলবো ব্যাংক সংস্কার খুবই দ্রুত দরকার। স্টক মার্কেট বড় একটা চ্যাপ্টার। যদি স্টক মার্কেটের গত ৪/৫ বছরের অবস্থা দেখেন সেখানে হাহাকার ছাড়া কিছু পাবেন না। এ জন্য মানুষ আত্মহত্যা করেছে এবং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। স্টক মার্কেটের ওপর ইনভেস্টরদের কোন বিশ্বাস নেই। তো এই বিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেখবেন যে ক্যাটাগরি ডি’র শেয়ারগুলো হঠাৎ করে ভালো করছে, ভালো শেয়ারগুলো ভালো করছে না। এই যে শেয়ারের অযৌক্তিক উঠানামা- এগুলো যদি আমরা বন্ধ করতে পারি তাহলে ভালো হবে। আশা করছি এখন বন্ধ হবে। বিএসইসির বর্তমান ে চেয়ারম্যান যথেষ্ট দক্ষ। আমার মনে হয় উনি ভালোভাবেই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকার যারা আছেন, তাদের সঙ্গে আমরা ব্যবসায়ীরা একটু কথা বলতে চাই। বিশেষ করে আমরা যারা আবাসন খাতে আছি, আমাদের অনেক দিনের না বলা কথা জমে আছে। এই আবাসন খাতকে বিভিন্ন সময়ে যেভাবে মার্কিন করা হয়েছে। বিগত ১০ বছরে থার্ড জেনারেশন আবাসন ব্যবসায়ী যারা, তারা অনেক ভালো করেছে। কিন্তু তাদেরকে সেভাবে স্পেস দেয়া হয়নি। তাদের স্পেস দিলে ফাস্ট জেনারেশন মনে করছে তাদের আধিপত্য থাকবে না। এফবিসিসিআইয়ের সবার সঙ্গেই বসা হচ্ছে, এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু আমাদের আবাসন ব্যবসায়ীদের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের এক্টিভিটিস যেন সুন্দর হয় সে জন্য বসতে পারলে পরিস্থিতি আরও সুন্দর হবে।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরে রেমিট্যান্স বাড়ছে এটা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: প্রথমে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এটা পজেটিভলি দেখছি। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ার একটা সিগন্যাল আমরা সরকার পতনের আগেই পেয়েছি। কারণ আমাদের যারা প্রবাসী আছেন, তারা এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত ছিলেন। এ জন্য তারা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছিলেন। তার পরবর্তীতে এর একটা ফ্লো এসেছে। তারা সামনে আরও বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাবে বলে আমি খুবই আশাবাদী।