বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮৫

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমা হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৫ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। নিহতদের মধ্যে সাত নারী ও দুই শিশু রয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আল জাজিরা জানায়, আল-আহলি স্টেডিয়াম বহু বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। সেখানেই রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
বেঁচে ফেরা নাজওয়া নামের এক নারী বলেন, হাতে যা ছিল তাই নিয়ে পালিয়েছি। আমাদের কিছুই বাকি নেই। আতঙ্কে আছি। যাতায়াতও ব্যয়বহুল, জিনিসপত্র আনার সামর্থ্য নেই।
জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে এবং হাজারো মানুষকে দক্ষিণে পালাতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেছেন, এটি নিরাপত্তার কৌশল মাত্র। কিন্তু জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশনের মতে, আসল উদ্দেশ্য হলো গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
এ পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, আরও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গাজার যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনা উঠেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, তারা মানবতার যোগ্য নয়।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা গাজার জনগণের সঙ্গে আছি, এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে জানান, শান্তি প্রক্রিয়ায় নীরব আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। জুলাইয়ে ১৪২টি দেশ সমর্থন দিয়েছিল “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা”-কে, তার ভিত্তিতেই এই উদ্যোগ এগোচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ওয়াশিংটন আশাবাদী, এমনকি আত্মবিশ্বাসী যে অদূর ভবিষ্যতে অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের হাতে পৌঁছেছে।
তবে শান্তি প্রচেষ্টা বারবার ভেস্তে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। চলতি মাসের শুরুতে দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন তিনি—যারা তখন ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এর আগে মার্চে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ শুরু করেন নেতানিয়াহু এবং পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেন। এতে খাদ্যসংকটে বহু মানুষ না খেয়ে মারা যান। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।