রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত। কমিটিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি ও বুয়েটের একজন আইটি এক্সপার্টকে রাখতে বলা হয়েছে। 

একইসঙ্গে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলই থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি প্রথম শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি শেষে মঙ্গলবার (২১ মে) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত বলেছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিশুর ভর্তি নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এক্ষেত্রে অভিভাবকরাও দায় এড়াতে পারেন না।

এর আগে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বাতিল চেয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক একটি রিট দায়ের করেন। তাদের অভিযোগ— নির্দিষ্ট বয়সের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে স্কুলেটিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।

আরো পড়ুন: ফের পিছিয়েছে মামলার প্রতিবেদন

মাউশির ওই আদেশ মতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করেনি। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া ছিল বিধিবহির্ভূত। এসব ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে শিগগিরই মাউশিকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের পর এখন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য আসনে ভর্তি নিতে গত ৬ মার্চ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, আইনজীবী শামীম সরদার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

রিট আবেদনকারী ১৩৬ জন অভিভাবকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান, আর তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খুররম শাহ মুরাদ।

আরো পড়ুন: হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে মারধর ও হত্যার হুমকি ছাত্রলীগের

এ নিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে এবং ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে অভিভাবকদের করা পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়।

এর আগে, গত ১৯ মে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা ছিল।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

গত ২০ মার্চ এ ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত।

সেসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট মঙ্গলবার (২১ মে) রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।