বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একপক্ষ মাঠে ইজতেমা প্রস্তুতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, অন্য পক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে হত্যা মামলা করার জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে আবারো দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তারা জিএমপি সদর দপ্তর, জেলা প্রশাসন ও টঙ্গীতে উপপুলিশ কমিশনারের দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাদপন্থীরা নিহত বেলাল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। বৈঠক শেষে সাদপন্থীরা বলেছেন, আমরা হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে এসেও টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করতে পারছি না। পুলিশ আমাদের কথা ও আদালতের আদেশ মানছে না। পুলিশ বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে জুবায়েরপন্থীরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা করতে মাঠে প্রস্তুতির কাজ করছেন। কারণ এসময়ের মধ্যে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সাদপন্থীরা দ্বিতীয় পর্ব করতে না পারলে এক পর্বেই হবে ইজতেমা। আর সাদপন্থীরা করতে পারলে দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন: তিন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ-বদলি ও শৃঙ্খলা বিষয়ে পরামর্শ দিতে কমিটি

এরই মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে সংঘটিত তিন মুসল্লি নিহতের ঘটনায় জুবায়েরপন্থীদের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এই মামলায় ইতোমধ্যে তিনজন সাদপন্থী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিহত তিনজনের মধ্যে একজনের পরিবার হত্যা মামলা করার জন্য হাইকোর্টের মাধ্যমে আদেশ পেয়ে থানায় এজাহার করতে এসেছেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে ইজতেমার জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে দিন-রাত কাজ করছেন শুরায়ে নেজাম বা জুবায়েরপন্থীরা। ইতোমধ্যে জুবায়েরপন্থীদের পক্ষ থেকে সাদপন্থীদের ইজতেমা করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আর সাদপন্থীরা ইজতেমা করতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়ার পরও টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ বেলাল হোসেন হত্যা মামলা গ্রহণ করছে না। তিনি ন্যায়বিচার দাবি করেন।

আরো পড়ুন: সরকারি অর্থে কোনো অতিথিকে হজে নেয়া হবে না: ধর্ম উপদেষ্টা

জুবায়েরপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি হিসেবে মাঠে কাজ চলছে। আশা করি সময়মতো কাজ শেষ হবে। সঠিক সময়ে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জুবায়েরপন্থীরা ইজতেমা করবেন ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি। সাদপন্থীরা দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি করতে পারবেন বা পারবেন না সে বিষয়ে কোনো আদেশ আসেনি।

উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী, অন্য ভাগে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী। তাদের মধ্যে বিবদমান বিরোধে এবারো বিশ্ব ইজতেমা আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি জুবায়েরের অনুসারীরা এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া কথা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের।