×

জাতীয়

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ: নতুন সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ: নতুন সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

   

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা, মেক্সিকো, চীনের শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে বিশ্ববাণিজ্যে গতি কমার শঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশের সামনে কমশুল্কে রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছেন রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সুযোগ কাজে লাগাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি সরকারি সেবা সংস্থার সমর্থন দরকার। সেইসঙ্গে রপ্তানি বাড়াতে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিতের তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্কারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কানাডাও মার্কিন পণ্যে ২৫ ভাগ শুল্ক আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে। একই পথে হাঁটছে চীন ও মেক্সিকোও। চীনের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন কয়লার ওপর ১৫ শতাংশ ও অপরিশোধিত তেলের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং। বলা হচ্ছে- কৃষি যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ট্রাক ও বড় ইঞ্জিনের সেডান গাড়ির ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে চীন। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ট্রাম্প সরকারের শুল্কনীতি আমাদের দেশের রপ্তানিতে সুবাতাস বয়ে আনবে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বড় দেশগুলোর শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি এবং এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা তৈরি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে বিপদের কথা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরোপেও রপ্তানি কমতে পারে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে পারে।

তথ্য বলছে, নতুন শুল্কনীতিতে মার্কিন বাজারে দেশগুলোর পণ্যের দাম বাড়বে। তবে, বাংলাদেশী পণ্য ভোক্তাদের কাছে তুলনামূলক সাশ্রয়ী হবে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। চীন বাজারটির ২১ শতাংশ দখলে রেখেছে, ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৯ ভাগ। তাই, রপ্তানি বাড়াতে, সময়মত উৎপাদন ও জাহাজীকরণের নিশ্চয়তা চান ব্যবসায়ীরা। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ট্রাম্প সরকারের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত সুযোগটি আমাদের আরো লাভবান করবে। বাংলাদেশের জন্য, গড় শুল্ক এখনো ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা একটি আপেক্ষিক সুবিধা। বর্তমানে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে শুল্কারোপ এবং পাল্টা শুল্কারোপের কারণে বিশ্ববাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য এটা বড় একটা সুযোগ। শুল্ক লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে একটা অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে। এ কারণে ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশে নজর বাড়াবে। কারণ, তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভিত্তি অনেক মজবুত। ফারুক হাসান আরো বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা বড় সুযোগ। তবে  এজন্য আভ্যন্তরীণ সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, হঠাৎ আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো নীতি সিদ্ধান্ত উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। ব্র্যান্ড-ক্রেতারা এখনই এ বিষয়ে কৌশল নিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। সুবিধা চলে যেতে পারে প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতে। তাই নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ণ ঘটাতে হবে। পোর্ট ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। এখনো ঘুষ বাণিজ্য রয়ে গেছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি শামীম এহসান বলেন, ইউটিলিটি সাপ্লাই থেকে পোর্ট এবং এনবিআর সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আছে সেগুলোতে যদি সুস্থ সহযোগিতা পায় তাহলে আমি মনে করি, ট্রাম্প যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন সেখানে থেকে আমরা সুযোগটা নিতে পারব। এ সুযোগটা কিন্তু প্রথমে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের কাছেই আসবে। যদি আমরা নিতে না পারি তাহলে সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং এখন বাংলাদেশি নির্মাতারা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত সুযোগটি ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য, গড় শুল্ক এখনও ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা একটি আপেক্ষিক সুবিধা। বর্তমানে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যেখানে গত বছর প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। আমাদের টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের এখনো আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতাদের ক্যাটারিং করার জন্য উল্লেখযোগ্য অব্যবহৃত ক্ষমতা থাকায় একটি উচ্চ বাজার সুরক্ষিত করার জন্য বাংলাদেশকে তার শক্তি সরবরাহ উন্নত করতে হবে। আরো মার্কিন বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকেও আলোচনা করতে হবে। চীন ইতিমধ্যেই সব বাংলাদেশী পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে যার অর্থ এখানে তার উৎপাদন ইউনিট বিশেষ করে টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস ইউনিট স্থানান্তর করার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য যুদ্ধে বিনিয়োগ স্থানান্তরের মত ঘটনা ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে, দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ এবং নীতির ধারবাহিকতায় জোর দিচ্ছেন তারা। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে নির্বাচনের সংকট উত্তরণ যদি ঘটে, সেটি যদি এ বছরের মাঝামাঝি সময়েও করা যায়Ñ তাহলে দেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। সেটি যদি হয় তাহলে আমার মনে হয় পুন:রায় বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা আবারো বাংলাদেশে ফিরে আসবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুল্কযুদ্ধ চরম পর্যায়ে ঠেকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। যা ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অভিবাসন, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App