ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলায় ঝুঁকিতে পড়েছে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাস ভবনের আশপাশেই রয়েছে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনা। ফলে দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৬ জুন) সকালে তেহরান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন এবং আরো দুটি সংবেদনশীল অবকাঠামো—যেগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েল।

আরো পড়ুন : অবিলম্বে তেহরান খালি করার নির্দেশ ট্রাম্পের

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতা ও কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুগুলো দূতাবাসের খুব কাছাকাছি হওয়ায় আমরা সকল কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তেহরানের বাইরে উপযুক্ত নিরাপদ আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, তেহরানে অবস্থিত একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, একটি গুরুত্বপূর্ণ আইটি কমপ্লেক্স, এবং আরো একটি সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনা—বাংলাদেশ মিশনের এক কিলোমিটারের ভেতরে অবস্থিত। এদের লক্ষ্য করেই ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দূতাবাস কমপ্লেক্স মোটেই নিরাপদ নয়। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় শহরের বাইরে ৩০–৪০ কিলোমিটার দূরে সবাইকে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

তেহরানের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে তেহরানে অবস্থান করছেন রাষ্ট্রদূত, ২ জন কূটনৈতিক কর্মকর্তা, ৫ জন কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারসহ মোট প্রায় ৪০ জন। এছাড়া রেডিও তেহরানে আছেন আরো ২৭ জন বাংলাদেশি। এর বাইরে প্রায় ১০–১২ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন পেশাজীবী, এবং ২৮ জন বাংলাদেশি বর্তমানে তেহরানে অবস্থান করছেন। ১৩ জনু এদের দেশে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আটকে পড়েছেন তাঁরা।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরানের একাধিক স্থানে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তাঁরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তাঁরা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।

হটলাইন চালু

এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। রোববার ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও + ৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপসহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।