রাজধানীর বিজয়নগরে সেনা ও পুলিশের কিছু সদস্যের লাঠিচার্জে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ঘটনার সময় সেনা-পুলিশের উপস্থিতিতেই লাল শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে এলোপাথাড়ি লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ সদস্য দাবি করলেও তার নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

শনিবার (৩০ আগস্ট) সমালোচনার মুখে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। লাঠিচার্জ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বৈঠক চলছে। সিভিল পোশাকে থাকা ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

এরআগে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষের পর আল রাজী টাওয়ারের সামনে সেনা ও পুলিশের হামলায় নুরসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

আরো পড়ুন : নুরের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা, সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস

হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার (৩০ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আমরা এক সংবেদনশীল গণতান্ত্রিক উত্তরণের সময় পার করছি, যার প্রথম পদক্ষেপ জাতীয় নির্বাচন। তাই আজকের মতো অস্থিতিশীলতা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী সব পক্ষেরই সংযম ও সহনশীলতা বজায় রাখা জরুরি। দেশকে দলবাজি, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সেনাপ্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা তিনজনকেই স্পষ্ট করতে হবে, সরকারের নির্দেশে এ হামলা হয়েছে কি না।

এদিকে নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি শনিবার সকালে জ্ঞান ফেরেন। এরপর তার সিটিস্ক্যান করা হয়।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নুরকে হাসপাতালে আনা হলে প্রথমে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, নুরের মাথায় আঘাত ও নাকের হাড় ভাঙার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে ও জ্ঞান ফিরেছে। তবে ৪৮ ঘণ্টার আগে তাকে পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। নুরের চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।