বাজার থেকে ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
অর্থ পাচার রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপে দেশে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়—দুটোই বেড়েছে। ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। সাধারণত এ অবস্থায় ডলারের দাম কমার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার কিনে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ২৬টি ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় প্রতি ডলার কেনা হয়েছে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ১৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, অন্যদিকে ডলারের দামও ১২০ টাকার ওপরে থাকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের বাজারে ডলারের সরবরাহ, চাহিদা ও দামও নিবিড়ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিদিন সকালে ডলারের রেফারেন্স রেট প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঘোষিত রেফারেন্স রেটের চেয়ে বাজারদর কমে গেলে ডলার কেনার জন্য নিলাম আহ্বান করা হচ্ছে।
জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে। যেসব ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত ডলার ছিল, তারা নিলামে অংশ নিয়ে তা বিক্রি করেছে। এর ফলে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজার-নির্ভর হয়ে উঠেছে—যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম শর্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সাল থেকে দেশে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে তা ১২২ টাকায় পৌঁছায়। এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় চাপ পড়ে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।
গত তিন অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, যা মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। তবে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিজার্ভ সংকটের কারণে সরকারি আমদানিতে ডলার সহায়তা বন্ধ করতে হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে রিজার্ভ বাড়তে শুরু করলে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে।
এদিকে দেশে ডলার সংকট কাটাতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে প্রবাসী আয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, আর আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।