বুশরা গিয়েছিলেন ইমরানকে মুক্ত করতে, তারপর হলো রহস্যময় ঘটনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে গত সপ্তাহে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিক্ষোভটি, যা কয়েক দিন আগে রাজধানী শহরটিকে অচল করে দিয়েছিল, এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুশরা বিবি, যিনি সাধারণত রাজনীতির পরিসরে উপস্থিত থাকতেন না, এবার তাঁর স্বামীর মুক্তির দাবিতে প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বুশরার নেতৃত্বে প্রথম রাজনৈতিক পদক্ষেপ
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদের ডি চক এলাকায় বুশরা বিবি একটি শিপিং কনটেইনারের ওপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। কালো রঙের বোরকা এবং সাদা চাদর পরিহিত বুশরা তাঁর স্লোগান দেওয়া সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার সন্তানরা এবং ভাইয়েরা! আপনাদের আমার পাশে দাঁড়াতে হবে। এটা শুধু আমার স্বামীর বিষয় নয়, এটি পুরো দেশ এবং দেশের নেতার বিষয়।
বুশরা বিবির এই বক্তব্য এবং উপস্থিতি, বিশেষ করে ইমরান খানের কারাগারে থাকার পর, তার রাজনৈতিক অভিষেক হিসেবে দেখা হয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের কর্মী ও সমর্থকরা এতে অংশ নেন এবং বুশরা ঘোষণা করেন, খানকে ছাড়া আমরা ফিরব না।
সহিংসতার পরিণতি
বুধবার সূর্য ওঠার আগেই বিক্ষোভ শেষ হয়ে যায় এবং শহরের পরিস্থিতি অদৃশ্য হয়ে যায়। ডি চক এলাকায় যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, সেখানে কাঁদানে গ্যাসের ছোড়া এবং পুলিশি দমন-পীড়নের কারণে চারপাশের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এক প্রত্যক্ষদর্শী, সামিয়া (ছদ্মনাম), ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেন যুদ্ধ চলছে। তিনি জানান, তার স্বামীর কাঁধে গুলি লাগে এবং তারা প্রাণ বাঁচাতে ছুটছিলেন।
অভিযানটি প্রায় এক ঘণ্টা চলেছিল। বুশরা বিবি অবশ্য ওই সময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বুশরা একটি গাড়িতে করে স্থানটি ছাড়ছেন। যদিও ওই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ১টার দিকে সব বিক্ষোভকারী সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
বুশরার রাজনৈতিক আগ্রহের বিষয়
বুশরা বিবির এভাবে সামনে আসা একটি বড় চমক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ইমরান খানের সঙ্গে তার সম্পর্কের আগে, তিনি সাধারণত আধ্যাত্মিক উপদেশদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। তবে এ বিক্ষোভের মাধ্যমে তিনি রাজনীতির মঞ্চে প্রবেশ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পিটিআই দলের মধ্যে কিছু নেতার মতে, বুশরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে দলের কর্মীরা সক্রিয় থাকতে পারেন এবং ইমরান খানের অনুপস্থিতিতে দলের কার্যক্রম চালু রাখা যায়।
এদিকে, সরকার পক্ষের অনেকেই বলছেন, বুশরা নিজেকে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মন্তব্য করেছেন, "বুশরা সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইছেন।"
সহিংসতার পর সরকারের ভূমিকা
বিক্ষোভের সময় পুলিশ দাবি করেছে যে তারা গুলি চালায়নি, তবে কিছু বিক্ষোভকারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উপস্থিত ছিল। হাসপাতালে ভর্তি গুলিবিদ্ধ রোগীদের নথি থেকে জানা যায়, অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। পিটিআই সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন যে বুশরা বিবির প্রস্থান ঘটনাটি তাঁর রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।
এটি স্পষ্ট যে, বুশরা বিবির রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ পিটিআই সমর্থকদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। অনেকেই তাঁকে এখন ইমরান খানের রাজনৈতিক বার্তার প্রধান উপস্থাপক হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে ইসলামাবাদের বাসিন্দারা বুশরা বিবির ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছেন। এরই মধ্যে, বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন, এবং একে পাকিস্তানি রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে মূল্যায়ন করছেন।