×

পাকিস্তান

সামনে বন্ধুত্ব পিঠে ছুরি, পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের টানাপোড়েন, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বড় ইস্যু

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম

সামনে বন্ধুত্ব পিঠে ছুরি, পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের টানাপোড়েন, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বড় ইস্যু

ছবি : সংগৃহীত

   

প্রাণঘাতী অস্ত্রের ভাণ্ডার হাতিয়ে নেয়ার শর্তে আর্থিক করিডরের অন্তর্গত সমুদ্রবন্দরের মালিকানা দাবি। সুযোগ বুঝে ‘বন্ধু’কেই ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা! এই প্রস্তাব শুনে রেগে ওঠে ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র, জানিয়ে দেয় যে ব্ল্যাকমেলিং কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন দেখা দিতে পারে।

চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর সিপিইসির আওতায় ইসলামাবাদ ও বেজিংয়ের ‘অটুট বন্ধন’-এ শুরু হয়েছে সন্দেহের আঁচ। খবর অনুযায়ী, গ্বাদর বন্দর নিয়ে পাকিস্তান সেনা চীনকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি একেবারেই ভালোভাবে নিচ্ছে না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। 

উল্লেখযোগ্য, বেজিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অন্তর্গত এই সিপিইসিতে এখন পর্যন্ত ৬,২০০ কোটি ডলার লগ্নি করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় চিনের শিনজিয়াং থেকে পাকিস্তানের বালুচিস্তানের গ্বাদর পর্যন্ত রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।

পাক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্বাদর বন্দরের মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেজিংকে নতুন শর্ত দিয়েছে জেনারেল আসিফ মুনিরের নেতৃত্বাধীন ফৌজ। তাদের স্পষ্ট দাবি, এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ট্রাইকে সক্ষম পারমাণবিক শক্তি ইসলামাবাদকে সরবরাহ করতে হবে। আণবিক শক্তি দিতে না-চাইলে গ্বাদর বন্দর ভুলতে হবে ড্রাগনকে।

সম্প্রতি, অর্থনৈতিক করিডরের অন্তর্গত গ্বাদর বন্দর নিয়ে দুই দেশের আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনার নতুন শর্তের প্রস্তাব চীনের রাগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্ল্যাকমেলিংয়ের এমন প্রচেষ্টার জন্য ইসলামাবাদকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। 

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান সেনার পরমাণু অস্ত্রভান্ডার সম্প্রসারণের সক্ষমতা নেই। যদি তা থাকত, তবে এতদিনে পাকিস্তান আণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়িয়ে ফেলত। আর এ ক্ষেত্রে, চরম আর্থিক সংকট সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার বা সেনা একেবারে পিছপা হতো না বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে। এমনটি হলে, ভারতের নিরাপত্তার জন্য তা বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করত, যা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যায়।

কিন্তু ক্ষমতা না-থাকলে কী হবে, সাধ আছে ষোলো আনা! সেই জন্যেই চিনকে ফাঁসিয়ে পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার বৃদ্ধির নোংরা খেলায় নেমেছে ইসলামাবাদ। নেপথ্যে থেকে যাবতীয় কলকাঠি নাড়ছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। এ জন্য দাবার বোড়ে হিসাবে গ্বাদর বন্দরকে ব্যবহার করছে তারা।

অন্য দিকে গ্বাদরে নৌঘাঁটি তৈরির জন্য কয়েক কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বেজিং। মূলত, ভারতের উপর চাপ তৈরি করা এবং আরব সাগরে প্রভুত্ব স্থাপনই এর উদ্দেশ্য। এই এলাকার নৌঘাঁটি থেকে সহজেই পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে নজরদারি করতে পারবেন ড্রাগনের জলযোদ্ধারা। সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো যাবে আমেরিকাকেও।

পাক সেনা সংক্রান্ত খবর গোটা দুনিয়ার সামনে আনার ক্ষেত্রে ‘ড্রপ সাইট নিউজ’ নামের একটি ওয়েবসাইটের খ্যাতি রয়েছে। সেখানেই প্রথম চিনের কাছে মুনির সেনার আণবিক অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। এই ইস্যুতে বেজিং কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি নয় বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও পক্ষই কোনও বিবৃতি জারি করেনি।

কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ভারতের ক্রমাগত সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কে রয়েছে পাক সেনা। আর তাই যে কোনও মূল্যে পরমাণু হাতিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাইছে তাঁরা। এই পরিকল্পনায় অটল রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির। দেশের আর্থিক বিপর্যয় তাঁর সিদ্ধান্তে কোনও ফাটল ধরাতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরেই চিনকে ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধু’ বলে ঢাক পিটিয়ে এসেছে পাকিস্তান। দুই দেশের সম্পর্ক ‘হিমালয়ের চেয়ে উঁচু এবং সমুদ্রের চেয়ে গভীর’ বলে দাবি করে বেজিংয়ের সুনজরে থাকার চেষ্টা চালিয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু সূত্রের খবর, মুখে বন্ধুত্বের কথা বললেও গ্বদরে ড্রাগনের নৌঘাঁটি হোক, তা একেবারেই চাইছেন না জেনারেল মুনির ও তাঁর অধস্তন সেনা অফিসারেরা।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে গ্বদরে নৌসেনা ঘাঁটি নির্মাণ নিয়ে পাক সেনা ও সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চালায় বেজিং। ওই সময়ে চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’র নৌসেনাকে বালুচিস্তানের বন্দরটি ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ইসলামাবাদ। কিন্তু পরে এই ইস্যুতে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশ।

পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার বৃদ্ধির জন্য নতুন কৌশলে নামছে এবং এর পিছনে কাজ করছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তারা গ্বাদর বন্দরকে ব্যবহার করছে নিজেদের কৌশলগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে। চিন এই এলাকায় নৌঘাঁটি নির্মাণে কয়েক কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা মূলত ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং আরব সাগরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছে। এই ঘাঁটি থেকে চিন সহজেই পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরের উপর নজর রাখতে পারবে এবং আমেরিকাকেও চ্যালেঞ্জ জানানো সম্ভব হবে।

পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রথমবার খবর প্রকাশ পায় ‘ড্রপ সাইট নিউজ’ নামক একটি ওয়েবসাইটে, যেখানে পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে, বেজিং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

কিন্তু গোপন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্কিত পাকিস্তান এবং তারা যে কোন মূল্যে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির, যিনি দেশের অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান এবং চিনের সম্পর্ক 'হিমালয়ের চেয়ে উঁচু, সমুদ্রের চেয়ে গভীর'—এই ধরনের স্লোগান দিয়ে পাক সরকার বেজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গ্বাদরের নৌঘাঁটি বিষয়টি নিয়ে পাক সেনাপ্রধান ও তার অফিসারদের কিছুটা দ্বিধা ছিল। প্রথমে চিনের নৌবাহিনীকে গ্বাদরের বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বললেও পরে সিদ্ধান্ত বদলানো হয়।

এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখতে এবং চিনকে চাপে ফেলতে চাইছে। পাশাপাশি, গ্বাদরের নৌঘাঁটি ব্যবহার করে নিজেদের সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না পাকিস্তান। সূত্রের খবর, পাকিস্তান চিনের কাছে ‘দ্বিতীয় স্ট্রাইকের পরমাণু প্রযুক্তি’ পাওয়ার জন্যও আলোচনা করছে। দ্বিতীয় স্ট্রাইকের পরমাণু প্রযুক্তি হল পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ডুবোজাহাজ, যা সমুদ্রের গভীরে থেকে শত্রু দেশে আণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম। এমন ধরনের ডুবোজাহাজ চিহ্নিত করা অত্যন্ত কঠিন।

বর্তমানে ভারতের হাতে দুটি পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ রয়েছে, আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস অরিঘাট। এদের মধ্যে 'কে-৪' আণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, এবং ভারতের সামুদ্রিক পরীক্ষায় আরও একটি নতুন ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিদমন যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ভারত বিশ্বের চারটি স্থানে থেকে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষমতা অর্জন করেছে, যা সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘পারমাণবিক ত্রয়ী’ বা ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়েড’ বলে পরিচিত।

স্টকহোলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভারতের হাতে ১৭২টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের অস্ত্র সংখ্যা ১৭০টি। তবে, অস্ত্রের সংখ্যা একা পরিসংখ্যানের মাত্রা, এর কার্যকারিতা নির্ভর করে তাদের ক্ষমতা ও কিলোটনের উপর। ভারত বর্তমানে ভূমি, আকাশ এবং জল থেকে পরমাণু হামলা চালানোর উপযোগী ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ও মান ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App