অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম
রাষ্ট্রের পোশাক বদল হয়েছে, পরিবর্তন হয়নি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রের শুধু পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাবন্ধিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। রবিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে কমরেড আ ফ ন মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থীদের ভূমিকা এবং করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে আ ফ ন মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অভ্যূত্থানে রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি চরিত্রগতভাবে। বানর যদি মানুষের পোশাক পরে, তাহলে কি সে মানুষ হয়ে যায়? ওই পোশাক পরলেই কি বানর মানুষ হয়ে যাবে? রাষ্ট্র তো ওই বানরই রয়ে গেছে। তার পোশাক বদল হয়েছে, রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, আজও বাংলাদেশে আমরা উপনিবেশই দেখছি; আরেক ধরনের উপনিবেশ, ধনীদের উপনিবেশ। ঔপনিবেশিক শাসকেরা যেমন এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করত না, আজ বাংলাদেশের ধনীরা সেই কাজই করে। তারাই তো আমাদের সম্পদ পাচার করে, ব্যাংক লুট করে, লুণ্ঠন চালায়। আর যতভাবে পারে অর্থ সঞ্চয় করে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন যে অভ্যুত্থান ঘটল, সেই অভ্যুত্থানে কোনো বিপ্লব ঘটেনি। এক চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এই পতন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘটতো, ঘটতে পারতো। তাহলে আজ যারা পলাতক, তাদের পালাতে হতো না, তারা বেঁচে যেত। কিন্তু তারা তা চায়নি বলেই এ অভ্যুত্থান হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। আজ পৃথিবী জুড়েই পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের রূপ নিয়েছে।
আরো পড়ুন: ছাত্র-জনতার দখলে গুলিস্তান-আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সতর্ক পুলিশ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির অর্থায়নের কারণে বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে এবং শিক্ষা-চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের এখানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ভয়ংকর রকম শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। সেই বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যদি এখনো দাপট নিয়ে চলে এবং এ সরকার যদি তাদের ওপর ভরসা করে এখনো অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের চিন্তা করে, তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হচ্ছে? পরিবর্তনের যে আকাঙ্খা ও শক্তি প্রয়োজন ছিল, তার একটি অংশ জনগণের মধ্যে আছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানুষের মধ্যে অহেতুক একটি বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। ‘২৪ এর আন্দোলন কোনো বিপ্লব নয়, এটি অভ্যুত্থান। সমাজ ইতিহাসের একটি নিয়ম হলো মানুষের চেতনা অসমভাবে বিকশিত হয়। সবার চেতনা একসঙ্গে বিকশিত হয় না। তবে গণঅভ্যুত্থানের সময় একেবারে নিম্নস্তরের চেতনাসম্পন্ন মানুষও সামনে চলে আসে, এটি হলো একটি লক্ষণ।
তিনি বলেন, নেতারা যখন বলে হরতাল কর, পাবলিক তখন আগুন লাগানো শুরু করে দেয়। পিপলস লিডারশিপ তখন সামনে চলে আসে। এবার এসব বিষয় দেখা গেছে।
সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদ খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, হারুনুর রশীদ ভুইয়া, নাসির উদ্দিন আহমেদ নসু, মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।